ঈদে মিলাদুন্নবী ,নবী মুহাম্মদ সা. এর জন্মদিন উপলক্ষে পালিত একটি ধর্মীয় উৎসব যা ১২ রবিউল আওয়াল তারিখে পালন করা হয়
ঈদে মিলাদুন্নবী বা ঈদে মিলাদ হল ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সা.) এর জন্মদিন উপলক্ষে পালিত একটি ধর্মীয় উৎসব। মুসলমানদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন, যা প্রতি বছর ১২ রবিউল আওয়াল তারিখে পালন করা হয়।
ঈদে মিলাদুন্নবী কি? | ঈদে মিলাদুন্নবী সম্পর্কে কোরআন-হাদিসের দলিল
ঈদে মিলাদুন্নবী সম্পর্কে হাদিস ও দলিল:
১. হাদিসের অভাব: নবী মুহাম্মদ (সা.) এর জন্মদিন উদযাপন সম্পর্কে সরাসরি কোনো হাদিস নেই। ইসলামের প্রাথমিক যুগে নবী (সা.) নিজে তার জন্মদিন উদযাপন করেননি এবং সাহাবিরাও তা উদযাপন করেননি।
২. উমাইয়া খিলাফতের সময়: প্রথম দিকে মুসলমানদের মধ্যে ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপনের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। কিন্তু উমাইয়া খিলাফতের সময় (৭ম শতাব্দীর প্রথম ভাগ) থেকে এটি উদযাপিত হতে শুরু করে।
৩. ইসলামী ঐতিহ্য: বিভিন্ন ইসলামী ঐতিহ্য অনুসারে, অনেক মুসলিম সম্প্রদায় ঈদে মিলাদ উদযাপন করে থাকে এবং এতে নফল নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, দোয়া এবং দরূদ পাঠ করা হয়।
৪. অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুবিধা: অনেকে বিশ্বাস করেন যে, এই দিবস উদযাপন করে তারা নবী (সা.) এর প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রদর্শন করে। এছাড়া, এটি একটি সমাজে ঐক্য ও সহযোগিতারও প্রচার ঘটায়।
গুরুত্ব ও বিতর্ক:
মতভেদ: কিছু মুসলিম সম্প্রদায় ঈদে মিলাদ উদযাপনকে বৈধ মনে করে এবং এটি তাদের জন্য একটি ধর্মীয় আনন্দ ও সম্মান প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে দেখে। অন্যদিকে, কিছু ইসলামী স্কলার ও সম্প্রদায় এটি উদযাপনকে ইসলামী ঐতিহ্যের বিরোধী মনে করে।
উদযাপনের উপকারিতা: যারা এই দিবস উদযাপন করে, তারা নবী (সা.) এর জীবনের মহত্ব এবং তার উক্তি ও কাজের মাধ্যমে ইসলামের শিক্ষাগুলি আরও গভীরভাবে বুঝতে চেষ্টা করে।
সারসংক্ষেপে, ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন একটি ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠান যা অনেক মুসলিম সম্প্রদায় দ্বারা পালন করা হয়, তবে এটি ইসলামের মূলগ্রন্থ বা প্রাথমিক যুগের কোনো সুস্পষ্ট নির্দেশনা দ্বারা সমর্থিত নয়।
ঈদে মিলাদুন্নবীর স্বপক্ষে দলিল
এখন, যারা ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করেন ও এটিকে সমর্থন করেন তাদের দেওয়া কিছু যুক্তি হলো। আল্লাহ তায়ালা আল কোরআনে বলেন।
“আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমত প্রাপ্তিতে খুশি পালন কর যা তোমাদের সমস্ত ধন দৌলত অপেক্ষা শ্রেয়।” – (সূরা ইউনুস-৫৮)
অপর একটি আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, “আমি নিশ্চয় আপনাকে পুরো বিশ্বের জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছি”।
তো এখান থেকে বোঝা যায় যে, যেহেতু এই দিনে রাসুল সাঃ এর আগমন ও নবুয়ত প্রাপ্তি হয়েছে তাই আমরা চাইলেই এই দিনটাকে ঈদ হিসেবে পালন করতেই পারি। কিন্তু সমস্যা হলো এই একিই দিনে আবার রাসূল সাঃ ওফাত বরন করেন। তাহলে যেদিন আমাদের রাসুল সাঃ মৃত্যু বরন করলেন সেইদিনে কিভাবে একজন মুসলিম হিসেবে আপনি আনন্দ উৎসব করতে পারেন? তাই
এই দিনে আনন্দ মিছিল ও উৎসবের আয়োজন করা একেবারেই যুক্তিহীন। আমরা চাইলে অবশ্যই এইদিনে মহানবী হযরত মোহাম্মদ সাঃ এর জন্ম ও মৃত্যুদিন হিসেবে ইবাদত বন্দেগি করতেই পারি, চাইলেই রোজাও রাখতে পারি, তার জীবনি নিয়ে আলোচনা করতে পারি। এইসব বিষয় নিয়ে কোন সমস্যা নাই। কিন্তু আমাদের উচিত না কোন বিষয় নিয়েই বাড়াবাড়ি করা। কেননা রাসূল সাঃ ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেছেন।
ঈদে মিলাদুন্নবী তে আমাদের করনীয় কি?
ইসলামে সন্দেহের কোন অবকাশ নাই। আর ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করতেও সম্পুর্ন নিষেধ করেছেন রাসুল (সাঃ)। এই সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা আল কোরআনে ইরশাদ করেছেন।
“কিতাবধারী হে! নিজেদের ধর্ম নিয়ে অযথা বাড়াবাড়ি কোরো না। আর (ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করে) তোমাদের আগে যারা নিজেরা পথভ্রষ্ট হয়ে ও অন্যদেরকে পথভ্রষ্ট করে সহজ সরল পথচ্যুত হয়েছে, তাদের পথ অবলম্বন কোরো না।” (সুরা মায়িদা : ৭৭)
“হে কিতাবধারীরা! তোমরা তোমাদের ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়িতে লিপ্ত হয়ো না। আর আল্লাহ সম্বন্ধে যথাযথ বলো।” (সুরা নিসা : ১৭১)
উপরের আয়াত দুইটির মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে, ইসলামে ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ির কোন স্থান নাই। তাই আমাদের উচিত না এইসব বিষয় নিয়ে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করা। যেহেতু এই বিষয় নিয়ে ইসলাম বিশেষজ্ঞদের মাঝে মতো বিরোধ রয়েছে আর এটি কোন ফরজ বা ওয়াজিব বা সুন্নাত কোন ইবাদত ও না অথবা এটি এমন কিছুও না যে যেটি না করলে আমাদের গুনাহ হবে তাই এইসব এড়িয়ে চলায় আমাদের জন্য উত্তম।
বিদাই হজ্বের ভাষনে রাসূল (সাঃ) সমবেত জনতার উদ্দেশ্যে যে ভাষন দিয়েছিলেন, সেখানে তিনি বলেছিলেন-
“আমি তোমাদের জন্য দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি যতদিন আকড়ে ধরবে ততদিন পথভষ্ট হবে না। একটি হলো আল্লাহর কিতাব এবং অপরটি আমার সুন্নাহ্” (মিশকাত-১ম খন্ড হাদিস নং-১৭৭)
অর্থাৎ রাসুল (সাঃ) আমাদের বলে গেছেন আমরা যেন কেবল মাত্র আল্লাহ প্রদত্ত আল কোরান ও রাসূল (সাঃ) এর হাদিস অনুসরণ করি তাহলেই আমরা কখনো পথভ্রষ্ট হব না। আর আমাদের ও সেটিই করা উচিত৷ বর্তমান সময়ে। আর যেহেতু কোরান হাদিসে এই মিলাদুন্নবী সম্পর্কে সরাসরি কোন হুকুম নাই তাই আমাদের উচিত এসব থেকে দূরে থাকা।
কোরান হাদিসের মাধ্যমে আমাদের উপর যে হুকুম গুলো দেয়া হয়েছে সেই সবের বাইরে গিয়ে কোন কিছু করা মানেই ঝামেলায় জড়ানো। একজন মুসলিম হিসেবে নামাজ, রোজা, হজ্জ, যাকাত সহ অন্যান্য সকল ফরজ সুন্নত ও ওয়াজিব আমাদের পালন করা উচিত। এইসব নফল বা মুস্তাহাব বিষয় নিয়ে নিজেদের মাঝে ফেতনা সৃষ্টি করা নেহাত বোকামি ছাড়া আর কিছুই না। যেহেতু হযরত মোহাম্মদ সাঃ শেষ রাসুল ও নবী এবং এর কোন নবী রাসুল এই পৃথিবীতে আসবে না, তাই আমাদের উচিত হলো কোরান হাদিস অনুসরণ করে সেই অনুযায়ীই জীবনযাপন করা।
ইচ্ছাব্লগ এটি একটি প্রযুক্তি সম্পর্কিত টিউটরিয়াল এবং গাইড প্রদান করি থাকি। এই খানে যে কেও পড়তে ও লিখতে পাড়ে। এইখানে ফিচার,ছোটগল্প,কবিতা, আপনার জীবনের গল্প ইত্যাদি আপনার পছন্ডের লেখা পাঠাতে সরাসরি যোগাযোগ করেন। আমাদের প্রতিনিধি যাচাই করে আপনার সাথে যোগা করবে। লেখা জমা নিচ্ছে 👉
আপনি সরাসরি ইমেইল করতে পারেন 👉 ‘ icchablog@gmail.com’
লিখাটি ভালো লেগলে অবশ্যই কমেন্ট এবং আপনার ফেসবুক ওয়ালে শেয়ার দিতে পাশে থাকবেন।
ইচ্ছাব্লগ ডট কম/এম.এম
COMMENTS