ফিচার নিউজ, ফিচার মৃত্যুসালটা ছিলো ২০১৯। সদ্য উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছি। ভর্তি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করছি দেশের নাম করা বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে। কিন্তু দুর্ভাগ্
“মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসা”
সালটা ছিলো ২০১৯। সদ্য উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছি। ভর্তি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করছি দেশের নাম করা বিশ্ববিদ্যালয়
গুলোতে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে কোথাও হচ্ছিল
না। এক ভয়ংকর সময় পার করছি।পরিবারের চাপ আর নিজের হতাশা সব কিছু মাথায় চেপে বসে। জীবনে
চলার পথে বাঁচার আগ্রহ হারিয়ে ফেলি।মনে মনে ভাবতে থাকি পৃথিবী থেকে কি অদৃশ্য হওয়া
যায়? যদি অদৃশ্য হওয়া যেত তাহলে তাই করতাম। সেইসময়কালে অনেক বার আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলাম।তার
জন্য বহুবার চেষ্টা ও করছি । সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টির উদ্দেশ্য আর পরিবারের টানে শেষ অবধি
দেখা হয়নি।কিন্তু মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসেছি। গা শিউরে উঠার মতো ছিলো সেইদিনের
অভিজ্ঞতা।
জীবনটা কেমন জানি স্তির হয়ে আছে। পৃথীবির কোনো কিছু আর নিজের কাছে নিজের মনে হচ্ছিল না। হতাশা থেকে বাঁচার জন্য নানা উপায় খুঁজতে লাগলাম। কিন্তু কোনোটাই কাজে আসছে না। আমি আগে ভাবতাম মানুষ কেন আত্মহত্যা করে? এতো সুন্দর পৃথীবি এতে এতো মানুষ এতো এতো আপনজন।সব কিছু ছেড়ে কি ভাবে মানুষ নিজকে নিজের দ্বারা হত্যা করে। সেই দিন গুলোতে আমার মনে হলো মানুষ হতাশার ঠিক কোন পর্যায়ে গেলে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেই।
ফিচার মৃত্যূ
আমি তা ভালোই অনুভব করেছিলাম। কয়েকদিন পর হতাশ কাটানোর জন্য বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যাই মেঘনা নদী দেখতে।কিন্তু মাথা জুড়ে তখনো হতাশা কাজ করছিলো। তখন ভাবতে থাকি এখানে যদি আমার মৃত্যু হতো, তাহলে হয়তো কেউ বুঝতে পারতো না আমি আত্মহত্যা করেছি। সেইদিন আবহাওয়া ছিলো বেশ খারাপ। ৮ নাম্বার সিগনাল থাকায় সব নৌকা ঘাটে ভিড় করে আছে। নৌকার মাঝিরা সবাই তীরে ঝাল বানাতে ব্যস্ত। আমরা সবাই মিলে নদীর পাড়ে বাঁধা নৌকা থেকে উত্তাল ঢেউ দেখচি। যেমটা এর আগে কখনো কাছ থেকে দেখিনি।একটা একটা ঢেউ নদী তার নিজস্ব রূপ দেখাচ্ছে। হঠাৎ করে মনের অজান্তেই আমার পা পিছলে আমি উত্তাল নদীর ঢেউয়ে পড়ে যাই।আমি স্রোতের টানে ভাসতে থাকি। সবাই দাঁড়িয়ে দেখছে, কিন্তু উত্তাল ঢেউ থাকায় কেউ বাঁচানোর জন্য এগিয়ে আসছে না।আমার মনে হলো আমি আর বেঁচে ফিরতে পারবো না।প্রথমে কিছুটা ভয় পেয়েছিলাম।
শেষ মুহুর্তে ঠিক ভয় লাগেনা। আমার ধারনা মস্তিষ্কে প্রচুর
এড্রেনালিন ক্ষরন হয় এইজন্য। আমার খুব গভীর দুঃখবোধ হয়েছিলো। খুব কাছের প্রিয়জন মারা
গেলে যেমন দুঃখ হয় তার থেকে কিছুটা বেশি। পরে ভেবে বের করেছি আমরা নিজেরা তো নিজেদের
সব থেকে বেশি প্রিয়জন এইজন্যই হয়তো। আর মনে হয়েছিলো এত সুন্দর দুনিয়া সবটা আর দেখা
হলোনা। সবাই বলে মৃত্যুর যেমন এক মুহুর্তে
নাকি সারা জীবনের স্মৃতি চোখের সামনে ভেসে ওঠে এটাও ঠিকনা। এড্রেনালিন এর জন্য ব্রেইন
খুব ভালো কাজ করে। আমার সমস্ত চেতনা কাজ করছিলো কিভাবে এই স্রোতের টান থেকে বের হওয়া
যায়। আর ব্যাথা টের পাওয়া যায়না। আমার হাতের অনেক নখ উপড়ে গিয়েছিলো আকড়ে ধরার চেষ্টায়।
কিছুই টের পাইনি। মানব দেহ এক অতি আশ্চর্য যন্ত্র।
সেইদিন অবিশ্বাস্যভাবে আমি বেঁচে যায়।চিংড়ি মাছ ধরার একটা খুঁটিতে আমি নিজকে
কোনো রকমে আটাকায়।আমাকে যখন উদ্ধার করে উপরে তোলা হয়। তখন আমার পুরো শরীর মনে হচ্ছিল
কাজ করছে না।কিন্তু তখনো ব্রেন কাজ করছে।পাশ থেকে বলা মানুষের কথার শব্দ গুলো কানে
আসতে লাগে।এক জেলেকে বলতে শুনেছি, "আল্লাহ চেয়েছিলেন বলে বেঁচে ফিরেছে,নয়তো বাঁচার
কোনো সুযোগ ছিলো না।" আরেক জেলেকে বলতে শুনেছি, পোলাডার হায়াত আছে গো,পোলাডার
হায়াত আছে। তাই বেঁচে গেছে।
একটা অ্যাম্বুলেন্স ঢেকে আমাকে হসপিটাল পাঠানো হয়। এরপর আর কিছু মনে করতে পারিনি।দুইদিন হাসপাতালে থাকতে হয়। হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরি। আর সেইদিনের স্মৃতি গুলো মনে উঠতেই চোখের কোণে জল জমে।আমি ভাবতে থাকি মৃত্যু মানুষের একটা নিশ্চিত বিষয়।
এই পৃথিবীতে আমার কত আপন মানুষ আছে। কিন্তু
সেইদিন কেউ আামাকে মৃত্যুর দুয়ার থেকে বাঁচানোর চেষ্টাও করতে পারেনি। সেইদিন আমার মনে
হলো এই পৃথিবীতে বেঁচে থেকে এই সুন্দর পৃথিবী দেখা আল্লাহর অনেক বড় নিয়ামত।যেটা সবার
ভাগ্যে জোটে না।
পৃথিবীর মায়া সবাইকেই ছাড়তে হবে। তাই আগামী দিনগুলোতে সবার ভালোবাসা নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই। জীবনে চাওয়ার চেয়ে পাওয়া বেশি হয়ে গেছে। এজন্য ওপরওয়ালার কাছে কোটি শুকরিয়া। আমি সবসময় ভালো কিছু করতে চাই। জীবনে অসংখ্য বন্ধু জুগিয়েছি। শত্রু বলতে নেই আমার। যারা মানুষের ভালো চায়, আল্লাহ তাকে পথ চলতে সাহায্য করেন।
-0-
ইচ্ছাব্লগ এটি একটি প্রযুক্তি সম্পর্কিত টিউটরিয়াল এবং গাইড প্রদান করি থাকি। এই খানে যে কেও পড়তে ও লিখতে পাড়ে। এইখানে ফিচার,ছোটগল্প,কবিতা, আপনার জীবনের গল্প ইত্যাদি আপনার পছন্ডের লেখা পাঠাতে সরাসরি যোগাযোগ করেন। আমাদের প্রতিনিধি যাচাই করে আপনার সাথে যোগা করবে।
লেখা জমা নিচ্ছে 👉 :
আপনি সরাসরি ইমেইল করতে পারেন 👉 ‘ icchablog@gmail.com’
লিখাটি ভালো লেগলে অবশ্যই কমেন্ট এবং আপনার ফেসবুক ওয়ালে শেয়ার দিতে পাশে থাকবেন।
ইচ্ছাব্লগ ডট কম/এম.এম
COMMENTS