ছোট গল্প: পাশের সিটের মেয়েটা ছোট গল্প : রাস্তাটা আজ ভীষণ ফাঁকা গণপরিবহনের সংখ্যা একদম কম। ফিটনেছবিহীন গাড়ির বিরুধ্যে অভিযান চলছে। আর অভিয...
ছোট গল্প: পাশের সিটের মেয়েটা
ছোট গল্প : রাস্তাটা আজ ভীষণ ফাঁকা গণপরিবহনের সংখ্যা একদম কম। ফিটনেছবিহীন গাড়ির বিরুধ্যে অভিযান চলছে। আর অভিযান পরিচালনা করছেন সয়ং যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা কম থাকলে যাত্রির সংখ্যা পাল্লা দিয়ে বারে। আর তখনই শুরু হয় ভোগান্তির।
এক ঘন্টা ধরে জনি দাড়িয়ে আছে বাসের জন্য। বেশ কিছুক্ষন পর পর দু-একটি বাস আসতেই সবাই একেবাড়ে মৌমাছির মতো ঘীরে ধরে বাস গুলোকে। জনির পাশে রাস্তায় বেশ কয়েকটা জুতা পরে আছে। জনির বুঝতে দেড়ি হয়নি যে, কিছুক্ষন আগে এখানে বাসে উঠার জন্য এক জুতাক্ষয়ী যুদ্ধ্ব হয়েছে। এরই মধ্যে জনিও এক যুদ্ধে অংশ গ্রহন করলো। ঝুলে পড়লো কোন এক বাসের পাইপধরে। ঠোলেঠুলে কোন মতে মাজেখানে গিয়ে দাঁড়ালোসে।
জনি এখনও পুরোপুরী সুস্থ হয়নি। হাটুর ক্ষতটা এখনও ভীষণ প্যারা দিচ্ছে। তারই সাথে মাথায় চিন চিন ব্যাথাতো আছোই। কিছুক্ষণ পর একটা সীটও পেয়েগেলো সে। পাশের সিটে কে বসা তা নিয়ে তার কোন আগ্রহ নেই। সিটপেয়ে গেছে তা নিয়েই সে খুশি।
পানির বোতল বের করে ডগ ডগ করে কয়েক ডুব পানি খেয়েই নিজেকে এলিয়ে দিলো বাসের সীটে। লোকাল বাসগুলো ইধানিং সীটিং সার্ভীস ( চিটিং সার্ভীস ) হওয়ায় পুরনো ভাঙ্গা সীটে নতুন কভার লাগানো হয়েছে । যারা ৭ বা ৮ নম্বর বাসে নিয়মিত যাতায়াত করেণ তাদের কাছে এটি হানিমুন ট্রিপের বেডের মত লাগতেই পাড়ে। সিটের নিচের অংশ নরবরে হওয়ায় বাসের সাথে সিটটাও দুলছে ভালো। অসুস্থ শরীর আর ক্লান্তিতে চোখ বুজে এলো জনির।
বাসটি এতক্ষণে বিজয় স্বরণি সিগনাল পার হয়ে গেছে এমনিতেই নভোথিয়েটারের রাস্তাটা ফাকা থাকে আজতো আবার রাস্তায় গাড়িকম। ফাকা রাস্তা পেয়ে বিহঙ্গ গাড়ির ড্রাইভার নিজেকে ওডির কোন এক লেটেষ্ট মডেলের ষ্টেয়ারিংএ আবিস্কার করলো। এই শতকের শ্রেষ্ঠ গতি উঠালো বাসের চাকায়।
জানালার পাশে বসে থাকা মেয়েটির চুল এসে বার বার জনির মুখে পরছে। জনি খুবই ঘুমকাতুলে ছেলে। মেয়েটির চুল তার প্রিয় ঘুমের বারটা বাজিয়ে দিচ্ছে। সে খুব বিরক্ত হচ্ছে, বিরক্তি নিয়ে চুলগুলো সরাতেই মনে পড়ে গেলো জিনিয়ার কথা।
জিনিয়া যেদিন প্রথম তার মাকে নিয়ে ভার্সিটিতে আসে তখনই তার সাথে পরিচয় হয় জনির। জনির সাথে ক্যাম্পাস নিয়ে নানা বিষয়ে কথা হয় জিনিয়া এবং তার মায়ের সাথে। জনির কাছে জিনিয়ার মা মিসেস আয়েশার দাবি। সে যেন জিনিয়াকে নিজের ছোট বোনের মত করে দেখে তার টেককেয়ার করে। তবেই তিনি জিনিয়াকে এখানে ভর্তি করাবেন। মিসেস আয়েশার মত অনেকেই আছেন যারা প্রথম দেখাতেই মানুষকে খুব আপন করে ফেলে। একের পর এক দাবি উত্থাপণ করে তাদের কাছে।
জিনিয়ার মায়ের কথা শুনে জনির হিসেবে গুলমাল লেগে যায়। তবু সে জিনিয়ার দায়িত্ব নেয় এবং জিনিয়াকে ভর্তি করিয়েদেয় নিজেরই ডিপার্টমেন্টে। এরই মধ্যে ক্যম্পাসের সবাই জানে জিনিয়া জনির ছোট বোন। জুনিয়র কয়েকটি ছেলে জনিকে ইদানিং অনেক সম্মানর করছে। দেখা হলেই সালাম দিচ্ছে আর মথা নিচু করে কথা বলছে। আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে বউএর বড় ভাই কে সম্মান করতে হয়।
কিন্তু এই ছেলেগুলো জনিকে কেনই বা সম্মান করছে। তাদের সম্মানের সিষ্টেমটা তেলমারা চামচার মত। এসব নিয়ে জনির ভাবার সময় নেই। এমনিতেই ব্যাচারা জনি তার উপর চাপিয়েদেয়া ভাই-বোনের সম্পর্ক কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। জিনিয়াও জনির এই অবস্থা জানে। কিন্তু জনির সাথে এব্যাপারে কিছুই বলেনা। বুজতেও দেয়না দেখা হলে আরো বেশি বেশি ভাইয়া ভাইয়া বলে। অনেকটা রবিন ভাইয়ের মত।
রবিন ভাই আমাদের মেসের বড় ভাই মার্কেটিংএ কাজ করেন। যখন অফিস থেকে কোন ফোন আসে তখন প্রতি বাক্যে সাড়ে তিনবার স্যার বলে। চেষ্টা করে প্রতি শব্দে শব্দে স্যার বলতে।
জিনিয়ার প্রতিটি ভাইয়া ডাক জনির বুকে একেকটি বিশফুড়ারর জন্ম দেয়। মেয়টি জনির সাথে আলগা মজানিচ্ছে। জনি তাকে আর মজা নিতে দিবে না। যা হবার হবে জিনিয়াকে সে সত্যটা বলেই দিবে।
একদিন সাহস করে জিনিয়াকে বলেদেয় তার মনের কথা। সেই সাথে অনুরোধ করে এই কথা গুলো গোপন রাখার জন্য। জিনিয়াও মনে মনে জনির ব্যবহার ও তার কেয়ারিং দেখে আগে থেকেই হাফ ক্রাস। জিনিয়ার অবস্থাটা এখন এমনি নাচুনী বুড়ি তার পর ঢোলে বাড়ির মত হয়েছে।
জনির কথা শুনে মনে মনে খুশি হলেও তার সামনে বিরক্তিকর এক্সপ্রেশন দিয় সে। এটা মেয়েদের সভাব তারা কখনযে কি ভাবে আর কি ভেবে কি এক্সপ্রশন দেয় তা অস্কারের জুড়ি বোর্ডও বের কেরতে পারবে না।
জনির ভিষণ ভয় হচ্ছে জিনিয়া যদি তার মাকে সব বলেদেয়। তাহলে !!!?
এর মধ্যে পারিবারিক ভাবেও তাদের মধ্যে একটা সুন্দর সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। মিসেছ আয়েশা প্রায়ই জনিদের বাসায় বেড়াতে আসেন। জিনিয়ার বাবা নেই তার মাকেই সব দেখাশুনা করে।
সেদিন রাতে জনিকে ইনবক্স করে জিনিয়া। যা জনির কাছে আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়ার মত মনে হয়।
পরদিন সকালে ক্যম্পাসে গিয়ে জিনিয়ার সামনে যেতেই। হাটু কাঁপতে শুরু করে জনির। বার বার গলা শুকিয়ে যায় পেটের মাঝে বুডবাট শব্দ করা শুরু করে। জিনিয়া বিষয়টি বুজতে পেরে নিজ থেকেই জনির সাথে কথা বলে এবং তাকে সাভাবিক করে। জনিকে অনুরোধ করে তার সাথে অন্য সব দিরে মতই ব্যবহার করতে। কিন্তু তারা দুজনই জানে। এই পতানো কাজিন এখন আর কাজিন নেই সীমা অতিক্রম করফেলেছ অনেক আগেই।
প্রতিদিনের মতো বিকেলে জনি জিনিয়াকে নিয়ে ক্যম্পাস ছাড়ে বাসার উদ্দেশ্যে। জিনিয়া বাইকে চড়তে ভালোবাসে। আর বাইকের গতি যদি ৮০-১০০ মধ্যে হয় তাহলে তো কথাই নেই। জনির মনেও আজ অনেক আনন্দ। আনন্দে থাকলে মানুষের বিবেক কাজ করেনা। আজ জনিরও করছে না।
সামনে একটা বড় লড়ি দেখেও বাইকের গতি কমায়নি সে। বড়ং বার বার লুকিং গ্লাসে জিনিয়াকে দেখছে আর এক্সেলেটার বাড়ি দিচ্ছে সাথে নানা খুনশুটিতো চলছেই। জনি বাইকের সাইলেন্ছারে একটা নতুন ফিচার যোগ করেছে। ফিচারটার কারনে বাইকের শব্দ কয়েকগুণ বেড়ে যায় পাশা পাশি কাশির মত শব্দ করে সাইলেছারে। শব্দটা তার খুব ভালো লাগে নিজেকে রেইসের প্লেয়ার মনে হয়। লড়িটা কাছাকাছি আসতেই সাইলেণসারে কাশির শব্দটা বিকট হলো।
জনি নিজেকে আবিস্কার করে হাসপাতালের বেডে। এ কয়দিন সে আই সি ইউতে ছিলো। জ্ঞান ফিরে দেখে তার হাত পায়ের নখ বড় হয়েগেছে মাথার চুলও বড় হয়েছে। মাকেও বেশ রোগা দেখাচ্ছে। জনি প্রথমে এসবের কারণ বুঝতে পারেনি। পরে অবশ্য জানতে পেরেছে ৬৮ দিন সে লইফ সাপোর্টে ছিলো। এমন সিচুয়েশন থেকে খুব কম লোকই সুস্থ হয়। সাড়েতিন মাসের মাথায় জনি হসপিটাল থেকে ছুটি পায়।
বাড়িতে আরো দিন পনের বিশ্রামের পর। আজকেই প্রথম বের হয়েছে। মূল উদ্দেশ্য হলো জিনিয়ার সাথে দেখা করা। জ্ঞান ফিরার পরথেকেই জিনিয়ার মোবাইল এবং ফেবুতে নক করে যাচ্ছে কোন রেপন্স পচ্ছে না। কারো সাথে জিজ্ঞাস করলেও কেউকিছুই বলছেনা। জনি রিতিমত ঘবারে যায়।
নিজের প্রতি খুবই বিরক্ত সে। সেদিন জিনিয়ার কথায় সাড়া নাদিয়ে সাবধানে গাড়ি চালালে আজকের এই অবস্থায় পরতে হতো না তাকে। হেল্পারের ডাকে ঘুম ভাঙ্গে জনির। গাড়িটা এরই মধ্যে শেওরাপারা চলে এসেছে। পাশের সিটের মেয়েটা নামবে তাকে জায়গা করেদেয় সে। মেয়েটির পারফিউমটা তার পরিচিত। মেয়েটির চোখে ছিলো কাল চশমা আর হাতে ….. লাঠি।
এতক্ষণ মেয়েটি চুলদিয়ে তার চেহারা ডেকে রেখিছিলো। জানালাদিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকার কারণে মেয়েটের চেহারা দেখেনি সে। মেয়েটিকে দেখার পরথেকেই জিনির শরীরের রক্ত চলাচল যেন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে সে…
আরও পড়ুন: ছোট গল্প : দেও
COMMENTS