কাল রাতে ঢাকার তাপ মাত্রা ছিলো ১৫ডিগ্রী সেলসিয়াস। রাকিব একাধিক শীতের জামা পরে দুটা কম্বল মুড়ি দিয়ে ৯টার নধ্যেই ঘুমিয়ে পড়েছে। সকালে তার প্...
কাল রাতে ঢাকার তাপ মাত্রা ছিলো ১৫ডিগ্রী সেলসিয়াস। রাকিব একাধিক শীতের জামা পরে দুটা কম্বল মুড়ি দিয়ে ৯টার নধ্যেই ঘুমিয়ে পড়েছে। সকালে তার প্রেজেন্টেশন আছে। তাই তারাতারি ঘুমানো।
সকাল ৬টায় বাসা থেকে বের হয়ে মিরপুর এক নম্বর বাস স্টেশন। কন কনে শীত। ফুটপাতের দুই এক জায়গায় জলন্ত ছাই পরেআছে। এসব ছাইকে গিড়ে কুকুর গুলো লেজ মুড়া দিয়ে শুয়ে আছে।
পাশের এক ছাইয়েরস্তুপে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই দল কুকুরের মাঝে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হচ্ছে। রাতে নাইটগার্ড গুলো হয়তো এই আগুন জ্বলিয়েছিলো। এসব দেখতে দেখতেই মিনিট দশেকের মধ্যে বাস চলে আসলো।
এ সময় বাস গুলো ফাকা থাকে। আজ যে পরিমান ঠান্ডা পড়েছে রাকিব ছাড়া বাসে আর মাত্র দুই তিন জন যাত্রি আছে। এদের মধ্যে দুই এক জন চাদর মুড়িদিয়ে পা তুলে বসেছে। রাকিব র্ফমাল ড্রেসে। ব্লেজারের উপরে আরো একটা জেকেট পরেছে তবু শীতে কুকরে যাচ্ছে সে।
কিছু কিছু মানুষের কানে শীত বেশি লাগে। তার ইচ্ছে হচ্ছিলো কান টুপি পরে বেরোতে। কিন্তু চুল নষ্ট হবার ভায়ে কান টুপি ছাড়াই বেরোতে হলো। রাকিবের দুই সীট পিছনে এক মুরুব্বী বসেছে। তাকে দেখে তার দাদুর কথা মনে পরে গেলো। দাদু তাকে এই শীতে এভাবে দেখলে বলতো বেশি বাবু মরে ভাতে আর শীতে। শীতকাল এলে দাদু প্রায় সময়ই কথাটা বলতো।
জানালাটা ভালো ভাবে লাগানো যাচ্ছে না। ঠান্ডায় শরিরের রক্ত বরফ হয়ে আসছে। একটা চাদরও আনেনি সে। প্রেজন্টেশনে মোট ১৫ নম্বর। ৫ নম্বর ড্রেস-আপে আর বাকি ১০ উপস্থাপনায়। শীতে কাঁপছে আর ভাবছে লিখিত ৮৫ নম্বরের জন্য যদি এর ছিটে ফুটাও কষ্ট করা যেত তাহলে অনাআসেই ৪০/৫০ পাওয়া যত।
নিজের অজান্তেই মুখ থেকে গালি বেরিয়ে পরলো। খুব কম মানুষই আছে যারা নিজের ভুল বাঝতে পারে এবং এজন্য নিজেকে গালি দেয়।
আরও পড়ুন: বিরিশিরি আর সোমেশ্বরীর তীর বেশ মনোমুগ্ধকর!
সামনের সিটে চাদর মুড়ি দেয়া লোকটা সীগারেট খাচ্ছিলো। সে ভাবলো বাসে সীগারেট খাওয়ার জন্য তাকে গালি দিচ্ছে। লোকটি সীগারেট নিভিয়ে পকেটে রেখে দিলো। লোকটির চাদরের কয়েক অংশে ফুটো হয়ে আছে মনে হচ্ছে সীগাটেটের আগুনেই পুড়েছে। বাকি সীগারেটটি পকেটে রেখে সেও সীটের মধ্যে পা তুলে বসেছে ।
মনে হচ্ছে সদর ঘাট যাবে। লোকটি নিশ্চই মাছের ব্যাবসা করে। রাকিবের বেস কিছু অভ্যাস আছে। তার মধ্যে একটি হলো, অপরিচিত মানুশের সাথে কথা বলা। পরিচিক হওয়া। তাদের সম্পর্কে জানা। আর যদি সে ভীন্ন ধর্ম কিংবা ভীন্ন জাতির হয় তাহলেতো কথাই নেই।
রাস্তায় যাত্রি না থাকায় বাসের গতি কম। আর মাত্র বিশ মিনিট সময় বাকি আছে। সাজ্জাদ স্যার প্রেজেন্টেশন নেয়ার আগে হাজিরা ডাকে।তখন হাজিরা দিতে না পারলে এ কষ্ট বৃথা। রাকিবের কাপাকাপি আরো বেড়ে গেলো। কারণ শীতের সাথে এবার রিটেকের ভয়ও যুক্ত হয়েছে।
গতকাল আন্জুর সাথে রাগারাগি হয়েছে। আন্জু মেয়েটা বড্ড রাগী সে নিজের কথাছাড়া অন্য কারো কথা শুনতে চায়না। কামার্সের যারা পড়াশুনা করে তাদের মেজেজ খিটখিটে হয়। রাকিব আন্জুকে অনেক ভালোবাসে। তাকে হারাতে চয়না। তাই সে আন্জুর সব কথা মেনে নেয়। ওর নাম আসলে আন্জুমান। রাকিব তাকে আন্জু বলে ডাকে। এটাও আন্জুরই ইচ্ছায়। কাল রাতে ফোনে কথা বলতে চেয়েছিলো আন্জু।
কিন্তু রাকিব প্রেজেন্টেশন আছে বলে তারাতারি ঘুমানোর কথা বলে। তুবুও আন্জু কথা বলতে চায়। কারণ সে সব সময় কথা বলার সুযোগ পায়না বা মুড থাকেনা। রাকিব ফোন রেখে ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে উঠে আন্জুর মেসেজ পায়। সেখানে লেখাছিলো। “সেদিন সারারাত তাস খেলেছিস তারপর না ঘুমিয়ে সকালে তোর খালার বাসায় গেছিলি। ভালো।
এমন আরো অনেক কাহিনি আছে তোর। তুই আমারে কান্দাইছিসতো দেখিস সকালে তুই গাড়িই পাবিনা। পাইলেও গাড়ি দারাবে বেশি চলবে কম। আর শুধু এই পরিক্ষাইনা এ সেমিস্টারে সব গুলাতেই তুই রিটেক খাবি। তোরপ্রতি আমার অভিশাপ রাইলো।” অতপর ব্লক।
আন্জুর এই অভিশাপের ফলেই রাকিবের ভয়টা আরো বেড়ে গেছিলো। কারণ বছর দুই আগে আন্জু বৃষ্টিতে ভীজতে চেয়েছিলো। কিন্তু রাকব ভিজেনি জ্বর হওয়ার ভয়ে। তখনও সে জ্বর হওয়ার অভিশাপ দিয়েছিলো। এর দুই দিনপরেই সে রাকিবের চিকন গুনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলো।
৮.৫০ মাত্র পল্টন মোড়। নয়টায় সাজ্জাদ স্যার হাজিরা ডাকবেন। গাড়িতে বসেই পাঠাও অ্যাপসে রাইোর খুজলো। আগে অতিরিক্ত শীতের ভয়ে বাসেই উঠে পরে। রাকিবকে তার বন্ধুরা নন্দ মামা বলে ডাকে। সেনাকি ডিজিটাল নন্দলাল।
অনেক সময় নস্ট হয়ে গেছে এখন আর এই যান্ত্রীক ঠেলাগাড়ি দিয়ে গেলে আম ছালা দুইটাই যাবে। সজীব নামের এক জন রাইডারের পিছনে উঠে ১০ মিনিটেই ক্যাম্পাসে। ডিপার্টমেন্টে গিয়ে রিতিমতো বোকা বনে গেলো রাকিব। ডিপার্টমেন্টে ব্যাচের কাউকেই দেখা যাচ্ছেনা। কয়েকজন ছোট ভাই-বোন শহিদ মিনারের পাশে রোদ পোহাচ্ছে। ২২৬ নম্বর রোমে প্রেজেন্টেশন হওয়ার কথা।
বন্ধুদের কাউকে দেখতে নাপেয়ে সে ধরেনিলো সবাই ক্লাশে ঢুকে পরেছে। কিন্তু জনি ওকে রেখে একা যাওয়ার কথানা।
ঘরিকি নস্ট?
নাকি তারিখটাই ভুল করেছে সে?
জানুন 👉 : আমাদের সম্পর্কে
লেখা টি ভালো লাগলে অবশ্যই কমেন্ট এবং আপনার ফেসবুক ওয়ালে শেয়ার দিয়ে পাশে থাকবেন।
ইচ্ছাব্লগ ডট কম/এম.এম
COMMENTS