বিরিশিরি আর সোমেশ্বরীর তীর বেশ মনোমুগ্ধকর! নেত্রকোণার সুসং দুর্গাপুর উপজেলার ছোট্ট একটি গ্রাম বিরিশিরি। সোমেশ্বরীর কোল ঘেঁষে বয়ে চলা বিরি...
বিরিশিরি আর সোমেশ্বরীর তীর বেশ মনোমুগ্ধকর!
নেত্রকোণার সুসং দুর্গাপুর উপজেলার ছোট্ট একটি গ্রাম বিরিশিরি। সোমেশ্বরীর কোল ঘেঁষে বয়ে চলা বিরিশিরিতে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস। ভ্রমণপিয়াসীদের জন্য এটি এক অনন্য জায়গা বিরিশিরি আর সোমেশ্বরীর তীর। সাদা মাটির পানির রঙটাকে যেন আরও বেশি গাঢ় করে দিয়েছে। তবে বিরিশিরি গিয়েই আপনি এই সুন্দর দূশ্য দেখতে পারবেন সেটা কিন্তু না আপনার যেতে হবে আর একটু দূরে বিজয়পুর চীনা মাটির পাহাড়ে।
মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিয়ে নেত্রকোণার বিরিশিরি আর সোমেশ্বরীর তীরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করি।
যাত্রার মূল উদ্দেশ্যই ছিল নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের বন্ধন বৃদ্ধি, অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ, বাংলাদেশের পর্যটন স্থানসমূহ জানা, বৈচিত্র্যময় জ্ঞানে নিজেকে সমুদ্ধ করা ও ভ্রমণ শেষে ফিচার লিখে সাংবাদিকতার শিক্ষার্থী হিসেবে নিজেকে শাণিত করা।
ঢাকা মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে ময়মনসিংহের নেত্রকোণার বিরিশিরির উদ্দেশ্যে গত (১৫ নভেম্বর) রাত ১০টায় যাত্রা শুরু হয়। ‘বাস’ পরিবহন এর সিডিউল মোতাবেক মহাখালী টার্মিনাল থেকে মিরপুর হয়ে সাভার গিয়ে কিছু শিক্ষার্থী নিয়ে বিরিশিরি যাওয়ার কথা থাকলেও, পরিবহন ড্রাইভার ও হেলপার বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে- সাভার যেতে অসম্মতি প্রকাশ করে। ফলে সাভারের শিক্ষার্থীদের আবার মিরপুর আসতে হয়।
এতে মিরপুর থেকে রাত ১১টায় যাত্রা শুরুর কথা থাকলেও দুই ঘণ্টার বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়। এতে অনেকের মধ্যে কিঞ্চিৎ অভিযোগ সৃষ্টি হলেও, প্রকাশ পায়নি।
অতঃপর রাত ২টায় মিরপুর সনি হল থেকে বিরিশিরির উদ্দেশ্যে ছেড়ে দেয়। বাসের মধ্যে সহপাঠি এনাম, নাজমুল, নেতৃত্বে নবীনদের কণ্ঠে উচ্চারিত হলো- ‘ধন্য ধন্য মেরা সিলসিলা এলো দিল্লিতে নিজামুদ্দিন আউলিয়া’। নিমিষেই বিলীন হয়ে গেল কিঞ্চিৎ অভিযোগ, ভরে উঠল ভ্রমণ আনন্দের উচ্ছ্বাস।
প্রায় পাঁচ ঘণ্টার যাত্রা শেষে সকাল ৭টার দিকে বাস বিরিশিরি পৌঁছায়। বাস থেকে নেমে আমরা সবাই বিরিশিরি ওয়াইএমসিএ গেস্ট হাউসে উঠি। সেখানে ব্যাগ রেখে সকালের নাশতা শেরে এবার বিরিশিরির দর্শনীয় স্থান দেখার পালা-
বাংলাদেশের সীমানা এখানেই শেষ। বিজয়পুর জিরো পয়েন্ট[/caption]
সবাই বিরিশিরি যায় মূলত চুনাপাথরের লেক এবং গোলাপি পাহাড় দেখতে। এই জায়গাটার নাম সুসং দুর্গাপুর। ধুলোর ঢিবি পেরিয়ে, পাহাড় থেকে নেমে আসা কাচের মতো পরিষ্কার সুন্দর পানির সোমেশ্বরী নদী পার হয়ে, তপ্ত রোদ গায়ে মেখে আমরা গেলাম সেই লেকে। লেকের পানি টলটলে আকাশিরঙা। এই পানিতে কোনো মাছ বা অন্য কোনো জৈব প্রাণী নেই, এর দেয়াল ঘেঁষে উঠে গেছে পাহাড়, এই পাহাড়টি লেকের পানিকে আরও মনোহর করে তুলেছে।
রহস্য হলো নীল পানির হ্রদ আর তার বুক চিরে জেগে ওঠা সাদা রঙের কয়েকটি পাহাড়, মানে চীনা মাটির পাহাড়; যা বাংলাদেশে অদ্বিতীয়। বিশাল উঁচু পাহাড়ের পাদদেশে স্বচ্ছ নীলচে পানির ছোট হ্রদ ও তার পাশে জেগে ওঠা সাদা মাটির পাহাড় এবং পাশে থাকা গ্রামীণ অপরূপ দৃশ্য; যা অতি সহজে মানব হৃদয়ে আনন্দের জোয়ার তোলে।
তবে শুধু তাই নয়, নীল পানির হ্রদের পাশে পাহাড়ের ঢালে মনমাতানো সবুজের সমাহার। নীল পানির হ্রদ আর সবুজ ছোট ছোট আগাছা দিয়ে সাদা পাহাড় ঘেরা। তবে শুধু সাদা পাহাড় বললে ভুল হবে। কারণ, সেখানে দেখা মেলে লাল, লালচে, ধূসর ও গোলাপি রঙের পাহাড়েরও। সত্যি বলতে, বিভিন্ন রঙের পাথর দিয়ে গড়ে ওঠা এই পাহাড় বেশ মনোমুগ্ধকর।
সারাদিন প্রকৃতির মাঝে এতটাই বুঁদ হয়ে ছিলাম যে দুপুরের খাওয়ার কথা মনেই ছিল না। দেহ বলে তো কিছু একটা আছে। ক্লান্ত শরীর নিয়ে নীল পানিতে অবসাদ ঝেড়ে সাড়ে ৪টার পরে দুপুরে খাবার গ্রহণ।
খাবার শেষে সন্ধ্যায় ওয়াইএমসিএ গেস্ট হাউসে ফিরে কিছুটা বিশ্রাম। এরপর রাত ৮টা থেকে চলে গানের আড্ডা। এবার ওখানেই রাতের খাবার শেষ করে ফেরার পালা। বাসের সিটে শরীর এলিয়ে দিয়ে একরাশ পূর্ণ ভ্রমণতৃপ্তি নিয়ে, মনকে প্রফুল্ল করে আমাদের নীড়ে ফেরা।
আরও পড়ুন: সহপাঠীর সাথে প্রেম
লেখা জমা নিচ্ছে 👉 : জমা দিন
অথবা ,আপনি সরাসরি ইমেইল করতে পারেন 👉 ‘icchablog@gmail.com’
জানুন 👉 : আমাদের সম্পর্কে
ফিচার টি ভালো লাগলে অবশ্যই কমেন্ট এবং আপনার ফেসবুক ওয়ালে শেয়ার দিয়ে পাশে থাকবেন। ধন্যবাদ
ইচ্ছাব্লগ ডট কম/এম.এম
COMMENTS