জমি পরিমাপ করার বিভিন্ন পদ্ধতি,বাংলাদেশে জমি পরিমাপ করার পদ্ধতি,ভূমি পরিমাপ করার সুত্রঃ,ফিতা দিয়ে জমি পরিমাপ করার পদ্বতি ,কাঠা, বিঘা, একর অনুযায়ী জমি
হ্যালো বন্ধুরা আসসালামুয়ালাইকুম, ইচ্ছাব্লগ এ আপনাদের স্বাগতম আজ আমরা এমন একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো যা আপনাদের অত্তন্ত জরুলি হ্যাঁ জমি সংকান্ত । জমি আছে কিন্তু ঝামেলার মধ্যে পড়ে নাই এমন কেউ কে খুজে পাওয়া যাবে না।
বিভিন্ন সময় আমাদের জমিজমা মাপার প্রয়োজন হয়ে থাকে। গ্রাম বংলার একটা প্রবাত আছে যে আমিন ছাড়া জমি মাপা যাবে না। আমিন মানে মহা কিছু । জমি মাপতে পারে মানে মহা কিছু অর্জন করে ফেরেছে।
এই ধারণা ভুল আপনি ও মাপতে পারবেন আপনার জমি এর জন্য মাহামারি কিছু করতে হবে কিছু টেকনিক অবল্বন করলেই আপনার জমি আপনি মাপতে পারবেন।
তাই ঝামেলা এড়াতে নিজেই নিজের জমি মাপার নিয়ম কানুন জেনে নেন।
আজকের আমরা পাঠ্য বই এবং নেট রিচার্জ & নিজের মেধা শক্তিকে কাজে লাগিয়েজমি মাপার নিয়ম কানুন তুলে ধরার চেষ্টা করবো আশা করি আপনাদের উপকারে আসবে ।
জমি পরিমাপ করার বিভিন্ন এককের তুলনা ও ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করা হলো। ঝামেলা এড়ানোর জন্য বাসা-বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, খামার কিংবা বিভিন্ন অবকাঠামো তৈরি করার আগে জমি মাপা অতি জরুরী হয়ে পড়ে।
আপনার যদি জমি মাপার নিয়ম জানা থাকে তাহলে সহজেই এই কাজটি সেরে নিতে পারেন। এজন্য আমিন ডেকে অতিরিক্ত টাকা খরচ করার প্রয়োজন নেই।
এছাড়াও আপনার জমি মাপের বিভিন্ন পদ্ধতি জানা থাকলে কেউ প্রতারিত হলে সহযোগিতা করতে পারবেন এবং আপনাকেও কেউ প্রতারিত করতে পারবে না।
জমি পরিমাপ করার বিভিন্ন পদ্ধতি
ভূমি পরিমাপের পদ্ধতি বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। আমাদের দেশেও বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন রকম পদ্ধতি চালু দেখা যায়। পদ্ধতি যত রকম থাকুক না কেন সুত্র একই।
এই সুত্র ধরে বিভিন্ন এককের সাথে তুলনা করলে সহজেই বিভিন্ন রকম পরিমাপ সম্পর্কে অবগত হওয়া যায়। আবার বিভিন্ন অঞ্চলে ভূমি পরিমাপের ভিন্নতা থাকলেও সরকারিভাবে দুই প্রকার পদ্ধতি চালু রয়েছে।
১. শতাংশের হিসাব।
২. কাঠার হিসাব।
এই দুই প্রকার হিসাবে দলিল লেখনসহ ভূমি সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম সরকারিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। শতাংশ ও কাঠার মধ্যে সম্পর্ক হচ্ছে
১00 ভাগের ১ ভাগকে বলা হয় ১ শতাংশ। অধিক প্রচলিত শব্দ হচ্ছে ১ ডেসিমাল । অপরদিকে কাঠার উর্দ্ধতর একক হচ্ছে বিঘা এবং বিঘার উর্দ্ধতর একক হচ্ছে একর।
২০ কাঠা = ১ বিঘা জমি।
তিন বিঘা = ১ একর জমি।
এই হিসাবটি সার্বজনীন হিসাবে স্বীকৃত এবং সরকারিভাবে অনুমোদিত।
এছাড়াও বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারিভাবে হেক্টর পদ্ধতিও ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
বাংলাদেশে জমি পরিমাপ করার পদ্ধতি
আমাদের দেশে ভূমি বা জমি পরিমাপ করার জন্য ২ ধরণের পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
১. চেইন বা শিকল।
২. ফিতা।
জমির বর্গফুট কিংবা বর্গগজ কিংবা বর্গমিটার বার করতে হলে ফিতা দিয়ে জমি পরিমাপ করা হয়।
সরকারি ভাবে ভূমি পরিমাপ করা হলে চেইন ব্যবহার করা হয়। অপরদিকে আমিন বা যারা জমি পরিমাপ করে তারা ফিতা দিয়েই পরিমাপ করে থাকে।
এখন চেইন বা শিকল এর পরিমাপ করার প্রদ্ধতি বেশি। ফিতা সবার পরিচিত এবং সবার কাছে আছে । তাই জমি পরিমাপ করার সময় ফিতা ব্যবহার করেন।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, জমির পরিমাণ বেশি হলে চেইন এবং ভূমির পরিমান কম হলে ফিতা ব্যবহার করা সুবিধাজনক।
ভূমি পরিমাপ করার সুত্রঃ
একটা কথা মাথায় রাখবেন আপনি যে পদ্ধতি ব্যবহার করে ভূমি পরিমাপ করুন না কেন প্রথমেই আপনাকে জমির ক্ষেত্রফল বার করতে হবে। জমির আঁকারভেদে ক্ষেত্রফল বার করার নিয়ম আলাদা আলাদা হয়ে থাকে। ক্রমান্নে এই গুলো সম্পর্কে আলোচনা করবো ।
যেমন- বর্গক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল = বাহু X বাহু
কর্ণ = এক বাহু X ১.৪১৪
পরীসিমা = এক বাহু X ৪
উদাহরণ এর মাধ্যমে ব্যপার সহজ ভাবে বুজতে পারবেন।
মনে করি, বর্গক্ষেত্রের বাহুগুলোর দৈর্ঘ ১২০ বর্গ লিংক। তাহলে ক্ষেত্রফল হবে,
ক্ষেত্রফল = বাহু X বাহু
= ১২০ X ১২০
= ১৪৪০০ বর্গ লিংক।
ভূমি পরিমাপ অনুসারে আমরা জানি,
১ শতাংশ = ১০০০ বর্গ লিংক।
তাহলে জমির পরিমাণ,
১০০০ বর্গ লিংক = ১ শতাংশ
১ বর্গ লিংক = ১০০০ ভাগের এক ভাগ শতাংশ
শতাংশ হবে ক্ষেত্রফল / ১০০০
যেমন টা হবে = ১৪৪০০/১০০০
= ১৪.৪০ শতাংশ
সুতরাং ১৪৪০০ বর্গ লিংক = ১৪.৪০ শতাংশ। ( অর্থাৎ জমির মোট বর্গ লিংক ক্ষেত্রফলকে ১০০০ দিয়ে ভাগ দিলে শতাংশ পাওয়া যায় )
এখানে একটি আয়তকার বা বর্গাকার জমির উদাহরণ দেখানো হলো। কিন্তু বাস্তবে আপনাকে বিভিন্ন আকৃতির জমি পরিমাপ করার প্রয়োজন হতে পারে।
বিভিন্ন আকৃতির জমির ক্ষেত্রফল বের করার সূত্র আলাদা। তাই যে কোন আকৃতির জমি সঠিকভাবে ক্ষেত্রফল বের করার সূত্র ও পদ্ধতি সম্পর্কে আরোচনা করা আমাদের ইচ্ছাব্লগে আলোচনা করে আছে একটো দেখে নিবেন। এবার আসুন
ফিতা দিয়ে জমি পরিমাপ করার পদ্বতি
ফিতা দিয়ে জমি মেপে এর বর্গগজ বা বর্গফুট বের করে জমি পরিমাপ করা হয় বলে একে ফিতা পদ্ধতি বলা হয়।জমি মাপার সুত্রানুাসারে ক্ষেত্রফল বের করে বিভিন্ন হিসাবে ভূমি পরিমাপ করা হয়। বর্গগজ বা বর্গফুট হিসাবে জমি মাপার হিসাব নিম্নরুপ:
১ একর = ৪৮৪০ বর্গগজ = ৪৩৫৬০ বর্গফুট
অর্থাৎ ৪৮৪০ বর্গগজ বা ৪৩৫৬০ বর্গফুট জমির পরিমাণ হচ্ছে ১ একর।
১ বিঘা = ১৬১৩ বর্গগজ = ১৪৫২০ বর্গফুট
অর্থাৎ ১৬১৩ বর্গগজ বা ১৪৫২০ বর্গফুট জমির পরিমাণ হচ্ছে ১ বিঘা।
১ কাঠা = ৮০.১৬ বর্গগজ = ৭২১.৪৬ বর্গফুট
১ ছটাক = ৫.০১ বর্গগজ = ৪৫.০৯ বর্গফুট
১ বর্গমিটার = ১.১৯৬ বর্গগজ = ১০.৭৬ বর্গফুট
বর্গগজ বা বর্গফুট জমির ব্যাখ্যা
আমরা জানি, জমি পরিমাপ করার জন্য ভূমির ক্ষেত্রফল বের করে জমির পরিমান হিসাব করা হয়। তাই বর্গগজ বা বর্গফুট এর ক্ষেত্রে,
কোন জমির ক্ষেত্রফল যদি ৪৮৪০ বর্গগজ কিংবা ৪৩৫৬০ বর্গফুট হয় তাহলে জমির পরিমান হবে ১ একর।
একটি উদাহরণ:
মনে করুন, একটি জমির দৈর্ঘ্য ২২০ গজ এবং প্রস্থ ২২ গজ হলে জমির পরিমান কত হবে?
সুত্রানুসারে ক্ষেত্রফল = দৈর্ঘ্য x প্রস্থ
= ২২০ x ২২
= ৪৮৪০ বর্গগজ = ১ একর
কাঠা, বিঘা, একর অনুযায়ী জমি মাপার হিসাব
১ কাঠা = ১৬ ছটাক = ১.৬৫ শতাংশ = ১৬৫ অযুতাংশ
১ বিঘা = ৩৩ শতাংশ = ২০ কাঠা
১ একর = ১০০ শতাংশ = ৬০.৬ কাঠা = ৩.০৩ বিঘা
ব্যাখ্যাঃ ১০০ শতাংশ কিংবা এক হাজার সহস্রাংশ কিংবা ১০ হাজার অযুতাংশ পরিমান = ১ একর জমি। দশমিক বিন্দুর (.) পরে চার অংক হলে সাধারণত অযুতাংশ পড়া হয়।
কিলোমিটার, মিটার, সেন্টিমিটার, মিলিমিটার, মাইক্রোমিটার, মাইল, গজ, ফুট, ইঞ্চি ইত্যাদি হিসাবের সম্পর্ক
১ কিলোমিটার = ১০০০ মিটার = ১০৯৩.৬১ গজ
১ মিটার = ১০০ সেন্টিমিটার
১ সেন্টিমিটার = ১০ মিলিমিটার
১ মিলিমিটার = ১০০০ মাইক্রোমিটার
১ মাইক্রোমিটার = ১০০০ ন্যানোমিটার
১ মাইল = ১৭৬০ গজ = ১.৬ কিলোমিটার
১ গজ = ৩ ফুট
১ ফুট = ১২ ইঞ্চি
১ ইঞ্চি = ২.৫৪ সেন্টিমিটার
জমি পরিমাপ করার ক্ষেত্রে ছটাক, বিঘা ও কাঠার সম্পর্ক
১ ছটাক = ২০ গন্ডা = ৪৫ বর্গফুট
১ কাঠা = ১৬ ছটাক = ৭২০ বর্গফুট
১ বিঘা = ৬৪০০ বর্গহাত = ২০ কাঠা = ৩৩০০০ বর্গলিংক = ১৪৪০০ বর্গফুট
জমির পরিমাণ খুব বেশি হলে হেক্টর অনুযায়ী হিসাব করা হয। জমির পরিমানে হেক্টরের সম্পর্ক হচ্ছে-
১ হেক্টর = ২.৪৭ একর = ৭.৪৭ বিঘা
জমির পরিমান বের করার বিভিন্ন আঞ্চলিক পরিমাপ
অঞ্চলভেদে বিভিন্ন প্রকারে জমি পরিমাপ করার পদ্ধতি প্রচলিত রয়েছে। বাংলাদেশ ও দেশেরে আশেপাশে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন ধরণের জমির পরিমাপ করার হিসাব যেমন- কানি-গন্ডা, বিঘা-কাঠা ইত্যাতি প্রচলন আছে।
অঞ্চলভেদে এই পরিমাপগুলোর আয়তনও বিভিন্ন রকমের লক্ষ করা যায়।
বিভিন্ন অঞ্চলে জমির পরিমাপ করার বিভিন্ন হলেও সারা দেশে সরকারিভাবে জমি পরিমাপ করা হয় একর, শতক পদ্ধতিতে।
শতাংশের হিসাব সারা দেশে সমান অর্থাৎ অঞ্চলভেদে শতকের আয়তনের কোন পরিবর্তন হয় না।
কানি পরিমাপের প্রকারভেদ
কানি দুই প্রকার । যথা-
এক. কাচ্চা কানি
দুই. সাই কানি
কাচ্চা কানি: ৪০ শতকে এক কাচ্চা কানি। কাচ্চা কানি ৪০ শতাংশে হওয়ার কারণে একে ৪০ শতকের কানিও বলা হয়।
সাই কানি: অঞ্চলভেদে এটির তারতম্য রয়েছে। কোথাও ১২০ ধরা হয় আবার কোথাও ১৬০ শতকে এক সাই কানি ধরা হয়।
কাঠার সাথে সতাংশের সম্পর্ক
১ কাঠা = ১.৬৫ শতাংশ ( ৩৩ এর মাপে)
১ কাঠা = ১.৫০ শতাংশ ( ৩০ এর মাপে)
মূলকথাঃ
আমরা আশা করি আপনাকে জমি মাপার কিংবা ভূমির পরিমাপ জানার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবে। আমাদের সংরহে বা লিখনির মধ্যে কোন প্রকার ভুল চোখে পড়লে আমাদের জানালে আমরা সংশোধন করে নিতে পারব সহজেই। এতে আমাদের ও অন্যান্য পাঠকদের উপকার হবে।
আপনার কাছে আমাদের তথ্য টি প্রয়োজনীয় মনে হলে নিজের ওয়ালে শেয়ার করে রেখে দিতে পারেন। ফলে প্রয়োজনের সময় খুব সহজেই খুজে পাবেন ।
COMMENTS