কিছু আমল করলে যাবতীয় মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পাবেন। যে ৯ আমলে মানসিক চাপ দূর হবে আমলগুলো জেনে নেয়া যাক- ° ১. কোরআন তেলাওয়াত করাঃ- কোরআন তেলাওয়াত মানু
কাজের জায়গা কিংবা পারাবারিক। অনেক সময় নানাবিধ দুঃশ্চিন্তা ও হতাশার কারণে এসব মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়। যা আপনার সব কাজেই বেশ খারাপ প্রভাব ফেলে। এসব চাপ সামলাতে অনেককেই হিমশিম খেতে হয়। কিছু আমল করলে যাবতীয় মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পাবেন।
যে ৯ আমলে মানসিক চাপ দূর হবে
আমলগুলো জেনে নেয়া যাক-
°
১. কোরআন তেলাওয়াত করাঃ-
কোরআন তেলাওয়াত মানুষের অন্তরকে প্রফুল্ল করে তোলে। কেননা কোরআন তেলাওয়াত মুমিনের প্রফুল্লতার অনন্য উৎস। শুধু তাই নয়, কোরআন তেলাওয়াতে মুমিনের মনের প্রফুল্লতা ও মানসিক প্রশান্তি বাড়তে থাকে। কোরআনের আলোয় আলো কিছু আমল করলে যাবতীয় মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পাবেন।
যে ৯ আমলে মানসিক চাপ দূর হবে
আমলগুলো জেনে নেয়া যাক-
°
১. কোরআন তেলাওয়াত করাঃ-
কোরআন তেলাওয়াত মানুষের অন্তরকে প্রফুল্ল করে তোলে। কেননা কোরআন তেলাওয়াত মুমিনের প্রফুল্লতার অনন্য উৎস। শুধু তাই নয়, কো কিত মানুষ দুনিয়ার সব দুঃশ্চিন্তা ও হতাশা থেকে থাকে মুক্ত।
°
২. নামাজে মনোযোগী হওয়াঃ-
যে কোনো বিপদ-মুসিবত, পেরেশানির সময় নামাজের মাধ্যমেই প্রকৃত প্রশান্তি লাভ কর যায়। কেননা নামাজের মাধ্যমেই বান্দা মহান আল্লাহর সাহায্য লাভ করে থাকেন। তাই মানসিক প্রশান্তি লাভে নামাজের ব্যাপারে যত্নবান হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
°
আল্লাহ তায়ালা বলেন-
- ’তোমরা নামাজ ও ধৈর্যের মাধ্যমে আমার সাহায্য প্রার্থনা কর। কিন্তু সে সমস্ত বিনয়ী লোকদের পক্ষেই তা সম্ভব।’
-
_________(সুরা বাকারা : আয়াত ৪৫)
°
- রাসূলুল্লাহ (সা.) কোনো কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হলে নামাজ আদায় করতেন।’ (আবু দাউদ)
°
সাহাবায়ে কেরামও এ আমলে অভ্যস্ত ছিলেন। ছোট থেকে ছোট কোনো বিষয়ের জন্যও তারা নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন। এমনকি জুতার ফিতা ছিড়ে গেলেও নামাজের মাধ্যমে সমাধা করতেন।
°
৩. সব সময় ইসতেগফার পড়াঃ-
মানসিক চাপ সামলাতে বেশি বেশি ইসতেগফারের বিকল্প নেই। যেসব কারণে মানুষ চাপে পড়ে, তন্মধ্যে অন্যায়-অপরাধ বেশি করা, অর্থকষ্টে থাকা, সন্তান-সন্তুতি না থাকা, জীবিকার অপ্রতুলতা ইত্যাদি। এ সবের সমাধানে কুরআনের নির্দেশ হলো ইসতেগফার করা। এ ইসতেগফারেই মানুষ উল্লেখিত সমস্যা থেকে সামাধন খুঁজে পায় বলে ঘোষণা করেছেন মহান আল্লাহ। কুরআনে এসেছে-
°
- ‘অতপর বলেছি- তোমরা তোমাদের পালনকর্তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের উপর অজস্র বৃষ্টিধারা ছেড়ে দেবেন। তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি বাড়িয়ে দেবেন, তোমাদের জন্যে উদ্যান স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্যে নদীনালা প্রবাহিত করবেন।’
- ____________ (সুরা নুহ : আয়াত ১০-১২)
°
- রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিয়মিত ইসতেগফার করবে, আল্লাহ তায়ালা তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন। তার সব দুঃশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন।’
___________(আবু দাউদ)
°
ইসতেগফার হলো-
> أَستَغْفِرُ اللهَ
উচ্চারণ : ‘আস্তাগফিরুল্লাহ।’
অর্থ : আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
°
> أَسْتَغْفِرُ اللهَ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ
°
উচ্চারণ : ‘আস্তাগফিরুল্লাহা ওয়া আতুবু ইলাইহি।‘
অর্থ : আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তার দিকেই ফিরে আসছি।
°
> رَبِّ اغْفِرْ لِيْ وَتُبْ عَلَيَّ إِنَّكَ (أنْتَ) التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ
°
উচ্চারণ : 'রাব্বিগ্ ফিরলি ওয়া তুব আলাইয়্যা ইন্নাকা (আংতাত) তাওয়্যাবুর রাহিম।'
অর্থ : 'হে আমার প্রভু! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমার তাওবাহ কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি মহান তাওবা কবুলকারী করুণাময়।'
°
> أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّومُ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ
উচ্চারণ : 'আস্তাগফিরুল্লা হাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল কইয়্যুমু ওয়া আতুবু ইলায়হি।'
অর্থ : 'আমি ওই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, যিনি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোনো মাবুদ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী এবং তাঁর কাছেই (তাওবাহ করে) ফিরে আসি।'
°
> رَبِّ إِنِّى ظَلَمْتُ نَفْسِى فَٱغْفِرْ لِى
°
উচ্চারণ : ‘রাব্বি ইন্নি জলামতু নাফসি ফাগফিরলি’ (সুরা কাসাস : আয়াত ১৬)
°
অর্থ : হে আমার রব! নিশ্চয় আমি আমার নফসের উপর জুলুম করেছি। সুতরাং আপনি আমাকে ক্ষমা করুন।’
°
৪. দরূদ শরিফ পড়াঃ-
দুরূদ পড়লে আল্লাহ তায়ালা বান্দার প্রতি রহমত নাজিল করেন। এ রহমত মানুষকে যাবতীয় মানসিক চাপ থেকে মুক্ত রাখে। এটি আত্মপ্রশান্তি লাভের সহজ উপায়ও বটে। কেননা রাসূলুল্লাহ (সা.) এর প্রতি দরূদ পড়া এমন একটি ইবাদত যে, আল্লাহ তায়ালা তা কবুল করে নেন। হাদিসে এসেছে-
°
হজরত উবাই ইবনে কাব (রা.) বর্ণনা করেন, আমি বললাম- হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনার ওপর অনেক বেশি দুরূদ পড়তে চাই। আপনি বলে দেন আমি দুরূদে কতটুকু সময় দেব?
তিনি বললেন- ’তুমি যতটুকু চাও!
আমি বললাম- এক চতুর্থাংশ সময়?
তিনি বললেন, তুমি যতটুকু চাও!
যদি আরো বাড়াও তা তোমার জন্যে ভালো।
আমি বললাম- অর্ধেক সময়?
তিনি বললেন- তুমি যতটুকু সময় পড়তে পার, যদি এর চেয়ে আরো সময় বাড়াও তোমার জন্যে ভালো। আমি বললাম- তাহলে সময়ের দুই তৃতীয়াংশ?
তিনি বললেন- তুমি যতটুকু চাও, যদি আরো বাড়াও তোমার জন্যে ভালো।
আমি বললাম- সম্পূর্ণ সময় আমি আপনার ওপর দুরূদ পড়ায় কাটিয়ে দেব।
তখন তিনি বললেন- তাহলে এখন হতে তোমরা পেরেশানি দূর হওয়ার জন্য দুরুদই যথেষ্ট এবং তোমার পাপের কাফফারার জন্য দুরুদই যথেষ্ট।’ (তিরমিজি)
°
৫. তাকদিরের ওপর বিশ্বাস রাখাঃ-
সুখ-দুঃখ, ভালো-মন্দ সব কিছুর ক্ষেত্রেই মুমিন বান্দা তাকদিরের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে। আর দুঃশ-হতাশা, অভাব-অনটন, বিপদ-আপদে তাকদিরের উপর বিশ্বাস থাকলে কোনো মানুষই মানসিক চাপে ভোগে না। তাই মানসিক চাপের সময় মহান আল্লাহর উপর ভরসা করে তাকদিরর উপর ছেড়ে দেয়ায় রয়েছে মানসিক প্রশান্তি। আল্লাহ তায়ালা বলেন-
°
- ’আল্লাহ তোমাদের কষ্ট দিলে তিনি ছাড়া অন্য কেউ তা মোচন করতে পারে না। আর আল্লাহ যদি তোমার মঙ্গল চান, তাহলে তার অনুগ্রহ পরিবর্তন করারও কেউ নেই।
-
___________’ (সুরা ইউনুস : আয়াত ১০৭)
°
- ‘পৃথিবীতে অথবা ব্যক্তিগতভাবে তোমাদের ওপর যে বিপর্যয় আসে আমি ইহা সংঘটিত করার আগেই ইহা লিপিবদ্ধ থাকে; আল্লাহর পক্ষে ইহা খুবই সহজ।’
-
___________ (সুরা হাদিদ : আয়াত ২২)
°
৬. কোনোভাবেই হতাশ হওয়া যাবে নাঃ-
অনেক ক্ষেত্রেই হতাশা থেকে মানসিক চাপের সৃষ্টি হয়। তাই দুনিয়ার জীবনে বিপদ-আপদে হতাশ না হওয়াই ঈমানদারকে কাজ। যে কোনো সময় যে কোনো ধরনের বিপদ-আপদ আসতে পারে এ মানসিকতা সব সময় পোষণ করা। ফলে তা মানুষকে বিপদে হতাশা থেকে রক্ষা করে মানসিক চাপমুক্ত রাখে। কোরআনুল কারিমে এসব বিপদ-আপদ দিয়ে বান্দাকে পরীক্ষার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন-
°
‘আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করবো সামান্য ভয় ও ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফসলের কিছুটা ক্ষতি দিয়ে; আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও- যাদের ওপর কোনো বিপদ এলে বলে, ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’- নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর আর অবশ্যই আমরা তার কাছেই ফিরে যাব।’
_________(সুরা বাকারা : আয়াত ১৫৫-১৫৬)
°
৭. পরকালের কথা বেশি বেশি স্মরণ করাঃ-
মৃত্যুর স্মরণ মানসিক চাপকে একেবারেই মিটিয়ে দেয়। পরকালের কঠিন পরিস্থিতির কথা স্মরণ রাখলে দুনিয়ায় মানুষ স্বাভাবিক জীবন-যাপনে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। ফলে মানুষের দ্বারা কোনো অন্যায় কাজ করা সম্ভবপর হয়ে ওঠে না। তখনই মানুষ থাকে মানসিক চাপমুক্ত। কারণ পরকালের তুলনায় দুনিয়ার বিপদ-আপদ একেবারেই নগন্য। আল্লাহ বলেন-
°
’যেদিন তারা তা প্রত্যক্ষ করবে, সেদিন তাদের মনে হবে, যেন তারা পৃথিবীতে মাত্র এক সন্ধ্যা অথবা এক প্রভাত অবস্থান করেছে।
___________’ (সুরা নাযিআত : আয়াত ৪৬)
°
৮. আল্লাহর ওপর ভরসা রাখাঃ-
মানসিক অশান্তি থেকে মুক্ত থাকতে মহান আল্লাহর প্রতি তাওয়াক্কুলের বিকল্প নেই। কেননা তিনিই বলেছেন- ‘যে মহান আল্লাহর প্রতি তাওয়াক্কুল বা ভরসা করে, তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।’
___________(সুরা তালাক : আয়াত ৩)
°
৯. আল্লাহর কাছে দোয়া করাঃ-
মানসিক চাপ কমাতে নিয়মিত দোয়া করাও অন্যতম। কারণ হাদিসে দোয়াকে ইবাদতের মূল বলা হয়েছে। দোয়া বা প্রার্থনা করলে, কোনো কিছু চাইলে মহান আল্লাহ খুশি হন। না করলে বরং অসন্তুষ্ট হন। তবে দোয়ার ক্ষেত্রে হাদিসে বর্ণিত দোয়াগুলোকেই প্রাধান্য দেওয়া উচিত।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, আমি এমন একটি দোয়া সম্পর্কে জানি, কোনো বিপদে পড়া লোক যদি তা পড়ে তবে আল্লাহ তায়ালা সে বিপদ দূর করে দেন। সেটি হচ্ছে আমার ভাই (হজরত) ইউনুস (আলাইহিস সালাম)-এর দোয়া। তাহলো-
> لَا اِلَهَ اِلَّا اَنْتَ سُبْحَانَكَ اِنِّى كَنْتُ مِنَ الظَّالِمِيْنَ
°
উচ্চারণ : ‘লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জ্বলিমিন।’
অর্থ : হে আল্লাহ! তুমি ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য নেই; আমি তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। নিঃসন্দেহে আমি জালিমদের অন্তর্ভুক্ত।’ (তিরমিজি)
°
আল্লাহ তায়ালা মসুলিম উম্মাহসহ সবার ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, কর্মক্ষেত্রের সব মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থাকতে উল্লেখিত আমলগুলো যথাযথভাবে করার তাওফিক দান করুন। কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক জীবন পরিচালনার মাধ্যমে মানসিক চাপমুক্ত জীবন গড়ার তাওফিক দান করুন।
COMMENTS