সামাজিকীকরণ হ'ল সমাজের আদর্শ ও আদর্শকে অভ্যন্তরীণ করার প্রক্রিয়া। সামাজিকীকরণ শেখা এবং শিক্ষাদান উভয়কেই অন্তর্ভুক্ত করে এবং এভাবেই "সামাজিক ও সাংস
সূচি পত্র:
১ |
সামাজিকীকরণ কী? |
২ |
গণমাধ্যম
সামাজিকীকরণ কি? |
৩ |
পিতা-মাতার মধ্যে সম্পর্ক |
৪ |
পরিবার
সামাজিকীকরণ |
৫ |
বেতার সামাজিকীকরণ |
৬ |
ধর্ম
সামাজিকীকরণ |
৭ |
খেলার সঙ্গী সামাজিকীকরণ |
৮ |
টেলিভিশন
সামাজিকীকরণ |
৯ |
লিঙ্গ সামাজিকীকরণ |
১০ |
শিক্ষা
প্রতিষ্ঠান সামাজিকীকরণ |
১১ |
চলচ্চিত্র সামাজিকীকরণ |
১২ |
সামাজিকীকরণে
গণমাধ্যমের ভূমিকা কি? |
বাংলাদেশী মানুষের সামাজিক
কাঠামো ও সামাজিকীকরণ।
সামাজিকীকরণ কী:
সমাজ বিজ্ঞানী MacIver বলেন, Society is the whole system of social relationship.'R.N. Gilchrist এর মতে Society is composed of number of individuals living together and entering into relationship with one another.' সমাজ হল পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা ব্যক্তিবর্গের সংঘবদ্ধ ব্যবস্থা যেখানে মানুষ সহযোগিতা, সম্পর্ক ও সহানুভূতির ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ ভাবে বসবাস করে।
সমাজ গড়ে ওঠার সাথে
পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয় জড়িয়ে আাছে। সামাজিকীকরণ এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে
মানুষ সমাজের সাথে পরিচিত হয়, সামাজিক রীতিনীতি, মূল্যবোধ ও ভাবধারা সম্পর্কে জ্ঞান
অর্জন করে।
সমাজবিজ্ঞানী
Bogardus এর ভাষায়, ‘সামাজিকীকরণ হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে ব্যক্তি জনকল্যাণের
নিমিত্তে একত্রে নির্ভরযোগ্য আচরণ করতে শেখে এবং এটি করতে গিয়ে সামাজিক আত্মনিয়ন্ত্রণ,
দায়িত্বশীল ও সুসামঞ্জস্য ব্যক্তিত্বের অভিজ্ঞতা লাভ করে।’সামাজিকীকরণ বলতে এমন একটি
প্রক্রিয়াকে বোঝায় যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মানব শিশু সমাজের একজন কাঙ্ক্ষিত পূর্ণাঙ্গ
সদস্য হিসেবে গড়ে ওঠে।
পরিবার সামাজিকীকরণ:
সামাজিকীকরণের
কতগুলো মাধ্যম রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পরিবার। পরিবারের ভূমিকাই সর্বাপেক্ষা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বলা হয়ে থাকে, শিশুর
ব্যক্তিত্ব বিকাশের পথে বংশগতি কাঁচামাল জোগায়, সংস্কৃতি নকশা জোগায় এবং পরিবারে
পিতা-মাতা কারিগর হিসেবে কাজ করেন।
কারণ শিশুর দৈহিক, মানসিক,
পার্থিব ও অপার্থিক যাবতীয় প্রয়োজন মেটায় পরিবার। কীভাবে কথা বলতে হবে, নিজের আবেগ
কীভাবে প্রকাশ করা যায়, তা শিশু পরিবার থেকে শিক্ষালাভ করে।
খেলার সঙ্গী সামাজিকীকরণ:
শিশুর সামাজিকীকরণে তার সঙ্গী বা খেলার সঙ্গীরা শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে থাকে। যাতে শিশু তার খেলার সঙ্গীদের সঙ্গে মেলামেশা করলে তার মধ্যে নেতৃত্ব দেওয়ার গুণাবলি তৈরি হবে।
সে স্বাবলম্বী হতে শেখবে। প্রতিটা মূহতে সে নিজেকে গড়ে তুলতে সাহায্য করে থাকবে। মূল কথা তার চাহিদা মোতাবেক খেলার সঙ্গী পাবে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সামাজিকীকরণ:
সামাজিকীকরণের
ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকাউ কোন অংশে কম না। প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষা সমাজের
সভ্যরা যাতে সামাজিক মূল্য, সামাজিক আদর্শ, সামাজিক অভ্যাসগুলো আয়ত্ত করতে পারে সেজন্য
প্রত্যেক সমাজ প্রতিটি সভ্যকে নির্দিষ্ট ভূমিকা পালনের শিক্ষাদান করে।
সমাজ তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের
মাধ্যমে শিশু-কিশোরদের সংস্কৃতি সম্পর্কে জ্ঞানদান করে। শিশু তার সঠিক গন্তব্যে পৌছাতে
পারে । প্রতিটা শিশু সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান শিক্ষার প্রয়োজন।
সামজিক আদর্শ, সামাজিক অভ্যাস
, নিদিষ্ট লক্ষে পৌছানোর জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এর কোর বিকল্প নাই।
গণমাধ্যম সামাজিকীকরণ:
সামাজিকীকরণের
ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের ভূমিকা লক্ষ্য করা যায়। গণমাধ্যমগুলো হলো সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন,
বেতার, টেলিভিশন, চলচ্চিত্র ইত্যাদি।
তবে এগুলো অনেক অংশে সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে গৌণ
ভূমিকা পালন করে।
মন্তব্য: বিবৃত আলোচনাকে বিচার
ও বিশ্লেষণ করে আমরা বলতে পারি, সামাজিকীকরণের বাহন হিসেবে পরিবার, খেলার সঙ্গী, ধর্ম,
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মুখ্য ভূমিকা পালন করে। আর গণমাধ্যমগুলো সামাজিকীকরণে গৌণ ভূমিকা
পালন করে থাকে।
বেতার সামাজিকীকরণ:
বেতার
যন্ত্র আজকাল সহজলভ্য হওয়ায় মূহুতের মাধ্যমে
সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে এর ভূমিকা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আমাদের দেশের গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর
বিনোদনের মুখ্য মাধ্যম হলো বেতার। সে কারণে এ মাধ্যমটি নানা ধরনের বিনোদনমূলক ও শিক্ষামূলক
অনুষ্ঠান প্রচারের মাধ্যমে ব্যক্তির সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারে।
তাই বলা যায় বেতার সামাজিকীকণে
কোন অংশেই কম বলা যাবে না সর্বপূরি অন্য সকল মাধ্যম এর চাইতে বেশি ভূমিকা পালন করে
থাকে।
টেলিভিশন সামাজিকীকরণ:
দর্শন
ও শ্রবণ ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে একই সঙ্গে তথ্য সংগৃহীত হওয়ায় অন্যান্য গণমাধ্যমের তুলনায়
টেলিভিশন পরিবেশিত তথ্য সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে অধিক কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে।
সঠিক সময় সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে
দেশীয় সংস্কৃতির অনুকূলে নানা ধরনের শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে টেলিভিশন সামাজিকীকরণে
বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে।
এক কথায় বলতে গেলে সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে অধিক কার্য়কর ভূমিকা
পালন করে বেশেষ করে দেখি এবং সুনার মাধ্যমে সরণ শক্তি বেশি থাকে।
চলচ্চিত্র সামাজিকীকরণ:
চলচ্চিত্র
সামাজিকীকরণের বাহন হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে যদি এদেশে শুধু বিনোদনধর্মী
না হয়ে আদর্শ ও বাস্তবধর্মী শিক্ষামূলক চলচ্চিত্র নির্মিত হয়। এ ধরনের চলচ্চিত্র
জনগণের ব্যক্তিত্বপূর্ণ মনোভাব গঠনের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে সক্ষম।
পিতা-মাতার সম্পর্ক সামাজিকীকরণ:
পিতা-মাতা সম্পর্কের মধ্য দিয়ে একটি শিশু সামাজিকীরণ শিক্ষা লাভ করে থাকে । একই পরিবারের একাধিক শিশুদের মধ্যে পরস্পরের সম্পর্ক থাকতেই পারে সভার সাথে উল্লিখিত সম্পর্ক ইতিবাচক হতে হবে।
তবে ঐ শিশুরা সৎ, ব্যক্তিত্বপূর্ণ
এবং আত্মবিশ্বাসী হয়ে গড়ে ওঠে এবং সমাজে সহজ জীবনযাপন করতে পারে। পিতা-মাতার মধ্যে
সম্পর্ক মধুর হলেই সে পরিবারের শিশুরা সুন্দর পারিবারিক পরিবেশে নিজেদের ব্যক্তিত্ব
গঠন করতে সক্ষম হয়।
বাকি অংশ পরবর্তীতে প্রকাশিত হবে অন্যদিকে পিতা-মাতার মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ, বিবাহ-বিচ্ছেদ, মারামারি বা পারিবারিক অশান্তি বিরাজ করলে সে পরিবারের শিশুদের মধ্যে মানসিক-দৈহিক সমস্যা দেখা দেবে এবং তারা নানা ধরনের অপরাধে লিপ্ত হয়।
পিতা-মাতা ও শিশুদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিরাজ করলে পরবর্তী সময় ওই শিশুরা আত্মবিশ্বাসী হয়ে গড়ে ওঠে এবং সমাজে সহজ জীবনযাপন করতে পারবে।
পরিবারের শিশুদের মধ্যে কেমন সম্পর্ক বিরাজ করবে তার ওপর ভিত্তি করে সে পরিবারের শিশুদের ব্যক্তিত্ব গঠিত হবে। সুতরাং শিশুর সামাজিকীকরণের সংস্থা হিসেবে পরিবারের পক্ষে যা করা সম্ভব অন্য কোনো সংস্থার পক্ষে তা অচিন্তনীয়।
ধর্ম সামাজিকীকরণ:
ধর্মীয়
অনুশাসন মানুষের জীবনকে নানাভাবে প্রভাবিত করে। শৈশবকাল থেকে যে ব্যক্তি যে ধর্মে বিশ্বাসী
সে ব্যক্তি সেই ধর্মীয় মূল্যবোধের মাধ্যমে লালিত হয় এবং সেই ধর্মীয় বৈশিষ্ট্যগুলো
পরবর্তীকালে তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে প্রতিফলিত হয়।
ধর্ম মানুষকে সামাজিক মূল্যবোধ
তথা সত্যবাদিতা, কর্তব্যপরায়ণতা, ন্যায়পরায়ণতা, সহমর্মিতা প্রভৃতি গুণে গুণান্বিত
হতে শিক্ষা দেয়। এককথায়, ধর্মীয় আচর-অনুষ্ঠান ব্যক্তির সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ায়
যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করে করতে সাহায্য করবে।
লিঙ্গ সামাজিকীকরণ:
লিঙ্গ সামাজিকীকরণ হ'ল প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে আমরা আমাদের সংস্কৃতির লিঙ্গ-সম্পর্কিত নিয়ম, মানক এবং প্রত্যাশা শিখি। লিঙ্গ সামাজিকীকরণের সর্বাধিক সাধারণ এজেন্ট-অন্য কথায়, যে প্রক্রিয়াটি প্রভাবিত করে তারা হলেন বাবা-মা, শিক্ষক, স্কুল এবং মিডিয়া।
সামাজিকীকরণে গণমাধ্যমের ভূমিকা:
সামাজিকীকরণে
ক্ষেত্রে গণমাধ্যম এর গুরুত্ব অনেক অংশে বেশি কেন না গনমাধ্যম অল্প সময়ের মাধ্যমে বিশ্বের
মাধ্যমে তুলে ধরতে গণমাধ্যমের প্রধান্য সব চাইতে বেশি।
গণমাধ্যমসমূহ মাধ্যম বলতে বুজায় সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন, বেতার, টেলিভিশন, চলচ্চিত্র ইত্যাদি। সামাজিকীকরণে গণমাধ্যম গৌণ ভূমিকা পালন করে। কারণ সামাজিকীকরণের বাহন হিসেবে পরিবার, খেলার সাথী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানত মৌলিক ভূমিকা পালন করে।
নিচে বিভিন্ন ধরনের গণমাধ্যমের
ভূমিকা বর্ণনা করা হলো। সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন : সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন, জার্মান প্রভৃতি
গণমাধ্যমে পরিবেশিত তথ্যগুলো সমাজের মূল্যবোধ, প্রথা, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি সম্পর্কে আলোচিত
হয়। এছাড়া সংবাদপত্র ও ম্যাগাজিনে এমন কিছু শিক্ষামূলক তথ্য প্রচার করা হয়, যার
দ্বারা শিশু-কিশোর এমনকি যে কোনো ব্যক্তির সামাজিকীকরণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
উল্লেখ্য
অনুশীলন। নিজস্ব চিন্তা চিন্তাধানা। লিটন কান্তি হালদার মাতামত। উইকিপিডিয়া। |
COMMENTS