রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে সচল রাখতে যা করণীয়

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ছোটখাটো অসুস্থতা আমাদের নিত্যসঙ্গী যা প্রতিনিহিত আমাদের জীবনের সাথে ঘটে থাকবে। যেমন- কাটাছেঁড়া, জ্বর, সর্দি এমন অনেক কিছুরই আমর

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ছোটখাটো অসুস্থতা আমাদের নিত্যসঙ্গী যা প্রতিনিহিত আমাদের জীবনের সাথে ঘটে থাকবে। যেমন- কাটাছেঁড়া, জ্বর, সর্দি এমন অনেক কিছুরই আমরা হরহামেশা মুখোমুখী হয়ে থাকবো । বর্তমানে আমাদের অসুস্থতা যেমন বেশি, ঠিক তেমনি ওষুধের ওপর নির্ভরশীলতাও রয়েছে। ছোটখাটো যেকোনো ধরনের অসুস্থতাতেই আমরা ওষুধ গ্রহণ করে ফেলি।

কিন্তু আল্লাহ তাআলা আসলে আমাদের শরীরের মধ্যেই অনেক সুশৃঙ্খল রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে দিয়েছেন। আমরা যদি নিজেদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে সচল রাখতে পারি, তাহলে কাটাছেঁড়াসহ বিভিন্ন ছোটখাটো অসুস্থতায় খুব সহজেই ওষুধের ব্যবহার কমিয়ে ফেলতে পারব। 

এরকম করতে পারলে চূড়ান্ত উপকার হবে আমাদেরই। কীভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে সচল রাখবো বুঝতে হলে প্রথমে জানতে হবে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা কেমন। আল্লাহ আমাদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের জন্য ভিন্ন ভিন্ন ধরনের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা দিয়ে রেখেছেন। যেমন- পাকস্থলীতে অ্যাসিড, মুখে বিভিন্ন রকমের মিউকাস এবং এনজাইম, নাকে পুরো নাসাল ক্যাভিটিতে মানে নাক থেকে শুরু করে ফুসফুসে বাতাস চলাচলের যেই সরু টিউব সেখানে মিউকাসের আস্তরণ, ত্বকের বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন ধরনের পিএইচ, চোখের জলীয় পদার্থ। 

এরকম সব অঙ্গের জন্য ভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা সৃষ্টিকর্তা 

আমাদের দিয়ে রেখেছেন উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, নিঃশ্বাস গ্রহণের সময় বাতাসের সাথে সাথে অনেক ধুলোবালি এবং জীবাণু আমাদের নাকের মধ্যে প্রবেশ করে এবং ফুসফুসে পৌঁছানোর আগেই নাসাল ক্যাভিটিতে থাকা মিউকাস আস্তরণে সেগুলো আটকে যায়। তখন এই ধুলোবালি এবং রোগজীবাণু ফুসফুসে পৌছাতে পারে না এবং এই আটকে থাকা ধুলোবালি এবং জীবাণু হাঁচি-কাশির মাধ্যমে বাইরে বেরিয়ে আসে।

 মানুষের রক্তে প্রবেশ করা রোগজীবাণু ধ্বংস করার জন্য যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, তা হচ্ছে রক্তের শ্বেত রক্তকণিকা। আমাদের হাড়ের অস্থিমজ্জা বা বোনমেরো থেকে তৈরি হয় শ্বেত রক্তকণিকা। রক্তকণিকা কয়েক ধরনের হয়ে থাকে। 

দেহে কী ধরনের জীবাণু প্রবেশ করেছে সেই অনুযায়ী সে ধরনের শ্বেত রক্তকণিকা তৈরি হয়। যেমন- প্রাথমিক পর্যায়ে অল্পসংখ্যক ব্যাকটেরিয়া যদি রক্তে প্রবেশ করে, তখন শ্বেত রক্তকণিকা সেটি ধ্বংস করার জন্য নিউট্রোফিল তৈরি করে।

 ব্যাকটেরিয়া বা রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুর সংখ্যা যদি বেশি হয়, তখন মনোসাইট তৈরি হয় দেহে। কোনো ধরনের অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী অবস্থা তৈরি হলে ইসনোফিল কাজ করে। দেহের শ্বেত রক্তকণিকার নিজস্ব মেমোরি আছে, তাদের মেমোরি দিয়ে টি-সেল কাজ করে দেহে প্রবেশকারী নির্দিষ্ট জীবাণুর জন্য নির্দিষ্ট অ্যান্টিবডি তৈরি করে রেখে দেয়। পরবর্তীকালে সেই জীবাণু আবার প্রবেশ করলে ওই অ্যান্টিবডি ধ্বংস করে ফেলে সেই জীবাণুনকে।

এখন যদি কখনও আমাদের হাত বা অন্য কোথাও একটু কেটে যায় আর আমরা যদি সাথে সাথে ডাক্তারের কাছে দৌড় দেই এবং অ্যান্টিবায়োটিক, ব্যথানাশক প্রভৃতি ওষুধ সেবন করি, তাহলে আমাদের শরীরের নিজস্ব যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আছে এবং দেহকে সারিয়ে তোলার স্বয়ংক্রিয় যে ব্যবস্থা দেহের অভ্যন্তরে আছে সেটা নষ্ট হয়ে যায়।

 কীভাবে নষ্ট হবে সেটাও আমাদের বিস্তারিত জানা উচিত। যখন কোথাও কেটে যায়, তখন আমাদের ব্রেইনে সিগনাল পৌঁছায় এখানে সমস্যা হয়েছে। এটা মেরামত করতে হবে। এই সিগনাল অনুযায়ী ব্রেইন তখন সেখানে শ্বেত রক্তকণিকা পাঠায় এবং রক্ত এমন কিছু উপাদান বয়ে নিয়ে আসে, যেগুলো সেই ক্ষত স্থানটি মেরামত করার কাজে লেগে যায়। 

শ্বেত রক্তকণিকা এসে কাটা জায়গায় অনুপ্রবেশকারী রোগ জীবাণুকে ধ্বংস করে দেয়। রক্তের অন্যান্য উপাদান রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। পরবর্তী ধাপে সেখানকার টিস্যু মেরামত করে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে আসতে চেষ্টা করে, যেটা কিছু সময়সাপেক্ষ।

 যে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছিল সেটা পুরোপুরি সুস্থ করে তুলতে আমাদের দেহ সক্ষম, যদি আমরা তাকে সেই সময়টুকু দেই। এখন যদি শুরুতেই আমরা সেখানে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ, মলম লাগানো শুরু করি এবং অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করি, তাহলে কাটাছেঁড়ার পরে ব্রেনে যে সিগন্যাল যাবে ব্রেন সে অনুযায়ী ক্ষতস্থান মেরামত করার জন্য সব উপাদান পাঠাবে না।

 ব্রেইন তখন বাইরে থেকে আসা ওষুধের জন্য অপেক্ষা করবে। এককথায় অলস হয়ে যাবে। বাইরে থেকে সাহায্য আসবে, ক্ষতস্থান মেরামত হয়ে যাবে- এই ভাবনায় সে বসে থাকবে। এটা একদমই সত্য একটা অবস্থা। ব্রেইন সব রকমের সুযোগ নেয় যদি তাকে দেয়া হয়। যদি আমরা অল্প কোনো অসুস্থতাতে ওষুধের উপর নির্ভর করি, ব্রেইন তখন নিজের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে অচল করে ফেলে।

 তাই ছোটোখাটো কোনো অসুখে আমাদের সাথে সাথেই ওষুধের শরণাপন্ন হওয়া উচিত নয়। কখনও সামান্য কাটাছেঁড়া হলে হাত দিয়ে চেপে রক্ত বন্ধ হওয়ার পরে পানি দিয়ে ভালোমতো ধুয়ে নিয়ে গজ কাপড় দিয়ে বেঁধে রাখলেই হবে। নিজের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উপরে ভিত্তি করে সময় নিয়ে সেই ক্ষত নিজে নিজেই সেরে যাবে।

 এভাবে কেউ নিজেই বুঝতে পারবে তার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কেমন সচল আছে। যদি ক্ষত অনেক বেশি গভীর হয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। কিন্তু ছোটখাটো প্রাথমিক অবস্থায় সবসময় ওষুধ ব্যবহার করা উচিত নয়। এটা আমাদের নিজেদের জন্য আত্মবিনাশী কাজ হবে।

 আল্লাহর দেয়া সুন্দর সুশৃঙ্খল নিয়মের উপর ভরসা করে আমাদের স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য গ্রহণ করা উচিত, যাতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সচল থাকে।

COMMENTS

Name

Airtel Offer,4,App Review,1,Bangla Story,8,Banglalink Offer,2,Blogger,7,Computer,17,Earning Tips,2,Education,36,Entertainment,4,Entire Bangladesh,3,Feature,15,Freelancing,4,Grameenphone Offer,7,Health Tips,11,Internet Tips,8,Islamic,32,Job Circular,2,Journalism,38,Land Infarmation,4,LifeStyle,22,Love Story,4,Mobile Phone,13,Mobile phone Price,7,Movie Review,2,Pc Motherboard Price,3,Pc Tips and trick,5,Pictures,5,Poems,13,Price,6,Robi Offer,3,Science & Technology,11,Sim Offer,10,Softwer Downlode,4,Teletalk Offer,1,Tips and trick,6,Traveling,1,Videos,1,Web Design and Development,18,Wordpress,8,Wordpress Theme,2,
ltr
item
ইচ্ছাব্লগ.কম: রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে সচল রাখতে যা করণীয়
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে সচল রাখতে যা করণীয়
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ছোটখাটো অসুস্থতা আমাদের নিত্যসঙ্গী যা প্রতিনিহিত আমাদের জীবনের সাথে ঘটে থাকবে। যেমন- কাটাছেঁড়া, জ্বর, সর্দি এমন অনেক কিছুরই আমর
https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjH4pLVH278Bfv7rAfCZZdEepj5p3NtlLXcU1FQw29HErMZJkO7QQFcL3N8Rr5LDKXB0NeHPyimxx-PSHVQXB2KrRnpjGz_yPJ107UMojcRpNzRloX-uBNH3t8lvgG2qvEB0wp94XDcW49t/s16000/httpswww.icchablog.com+%25282%2529.jpg
https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjH4pLVH278Bfv7rAfCZZdEepj5p3NtlLXcU1FQw29HErMZJkO7QQFcL3N8Rr5LDKXB0NeHPyimxx-PSHVQXB2KrRnpjGz_yPJ107UMojcRpNzRloX-uBNH3t8lvgG2qvEB0wp94XDcW49t/s72-c/httpswww.icchablog.com+%25282%2529.jpg
ইচ্ছাব্লগ.কম
https://www.icchablog.com/2021/07/blog-post.html
https://www.icchablog.com/
https://www.icchablog.com/
https://www.icchablog.com/2021/07/blog-post.html
true
7858640433134637496
UTF-8
Loaded All Posts Not found any posts VIEW ALL Readmore Reply Cancel reply Delete By Home PAGES POSTS View All RECOMMENDED FOR YOU LABEL ARCHIVE SEARCH ALL POSTS Not found any post match with your request Back Home Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago Followers Follow THIS PREMIUM CONTENT IS LOCKED STEP 1: Share to a social network STEP 2: Click the link on your social network Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy Table of Content