একদিন গাঙপাড়ে খুঁট দেওয়া গাভীটা আনতে গিয়ে দেখা গেল নেই। একে তাকে জিজ্ঞেস করে কোন সদুত্তর পাওয়া গেলনা। আমার গাইডারে দেখছ? দড়ি ছিঁড়া গেলে ত খুঁট থাকতো
একদিন গাঙপাড়ে খুঁট দেওয়া গাভীটা আনতে গিয়ে দেখা গেল নেই। একে তাকে জিজ্ঞেস করে কোন সদুত্তর পাওয়া গেলনা। আমার গাইডারে দেখছ? দড়ি ছিঁড়া গেলে ত খুঁট থাকতো! কিছুই নাই। তোমার গাই কোন ষাঁড়ে নিয়া গেছে গা।
যতীন বুড়া বুঝতে পারে কথার ইঙ্গিত।বয়স তো কম হয়নি।বিরাশিটা বছর পার করেছেন এই দুনিয়ায়।অত্যাচার নতুন নয়। একাত্তরেও মালাউন বলে অত্যাচারিত হয়েছেন। ধন ফেলে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে বেঁচেছেন। যাদের কাছে আমানত রেখেছিলেন তারা খিয়ানত করেছে।দেশ স্বাধীনের পরে গিয়েছিলেন খেদমত আলির কাছে।বাঁচমু বইলা মালুম করি নাই। ভগবান বাঁচাইয়া দিছে।অহন গয়নাগাটি আর জিনিসপত্তরডি দেওছে দেহি।
ভগবানে বাঁচায় নাই গো। আমার দয়ায় বাঁইচা রইছ।বাঁচাডারেই বড় মনে কইরা থাহ বুঝছ। ঐ যে গয়নাগাট্টি ঐতার কথা ভুইল্যা যাও। মালের বদলে জান পাইছ। (ক্রমশ)
গাভীটার খোঁজ চলল পরদিনও। গতকাল রাত হয়ে যাওয়াতে বেশি খোঁজাখুঁজি সম্ভব হয়নি। আজ পাড়ায় পাড়ায় বাড়ি বাড়ি ঘুরে সবাইকে জিজ্ঞেস করছেন গাভীটার কথা।
আমার গাইডারে দেখছ?
বুড়া ত দেহি গাই গাই কইরাই পাগল অইব। হোন মেসো গাইয়ের আশা ছাইড়া দেও। গাইয়ের কি আর চিহ্ণ
কী কইতাছ বুঝতাছিনা।
বুঝতানা তো।বুঝলে আর গাইয়ের খোঁজ করতা।বাল পাইকা ঝুনা অইয়া গেছে অহনও বুঝনা। আরে আজকেই বউ ঝিয়ের খোঁজ খবর রাখাই বলে কত কঠিন তার উপরে গাই।
একদমে কথাগুলো বলে একটু দম নেয় রমজান আলী ।মেসোর প্রতি অনেক রাগ। আরে মেসো আবার কিসের? একটা কিছু ডাকতে হয় বলে ডাকা। না হলে মালাউন আবার ইষ্টিগোষ্টি কিছু হয় নাকি? রমজানের রাগের কারণ হচ্ছে মূলত ভয় থেকে। তার ভয় এই বুড়ো আজ বাদে কাল তো ইন্ডিয়া চলে যাবেই। তার জমিজমা ঘরবাড়ি তার কাছে না বেচে যদি তালুকদার বা আকন্দের বেচে যায়। বুড়োর ভাব গতিক তো বুঝবার উপায় নেই।
মালাউনরা মনের কথা কয়না। রমজান রাতে রাতে দেখা করেছে যতীন বুড়োর সাথে।
মেসো উত্তরের কড়ইতলের জমিডা আমারে দেও।
জমি বেচবার কও? জমি বেইচা কী করমু আমি ? তারপরে কী কইরা খামু ?
ঐপারে গেলে একটা কিছু ব্যবস্হা অইব।
ঐপারে মানে? মরলে কী ব্যবস্হা অইব?
মরলে না মরলে না মেসো। ঐপারে মানে ঐ বডারের ঐপারে।
কারা করতে পারে এই কাম অনুমান করতে পার খুড়ো? আকন্দাজে কার কথা কমু কও?
হেইডাও ঠিক। গণেশ বিজ্ঞের মতো মন্তব্য করে। যতীন বাড়ি ফিরতে ফিরতে ভাবতে থাকেন কার কাজ হতে পারে? রমজান তালুকদার নাকি আকন্দের? তালুকদার আর আকন্দকে ছেড়ে তার মন কেন জানি রমজানকেই সন্দেহ করে।
মেয়ে দুটির বিয়ে দিয়েছেন নিজ জেলা ছাড়িয়ে। আসলে তার করার কী ছিল সবই প্রজাপতির সনির্বন্ধ। কাছেধারে আত্মীয় থাকলে বিপদে আপদে বল ভরসা পাওয়া যেত। আবার ভাবেন গরিবের আত্মীয় তো হয় গরিবেরাই। নিজে দুর্বল হয়ে অপরকে বল জোগাবে কী করে ? একটা পুত্র সন্তান থাকলে হয়তো উৎখাতের চিন্তা করতোনা। অন্যদের উপরও উপদ্রব তছরুপ হয় তবে তার মতো এরকম উঠেপড়ে লেগে নয়। মেয়েরা ও মেয়ে জামাইরা বেড়াতে অাসবে কদিন পরে। তার জন্য গিন্নি দুইটা বাক দেয়া মোরগ রেখে দিয়েছে। একদিন রাতে খোঁয়াড়ে শব্দ শোনা গেল। শেয়াল বা বনবিড়াল মনে করে বুড়ো বুড়ি দুজনে ঘর থেকেই হোস হোস করতে থাকলেন। তারপর বাতি জ্বেলে টর্চ হাতে বাইরে এসে দেখেন খোঁয়াড়ের দরজা হাট করে খোলা। শেয়াল বা বনবিড়াল নয় এটা মানুষের কাজ।
আমার গাইডারে দেখছ?
বুড়া ত দেহি গাই গাই কইরাই পাগল অইব। হোন মেসো গাইয়ের আশা ছাইড়া দেও। গাইয়ের কি আর চিহ্ণ
কী কইতাছ বুঝতাছিনা।
বুঝতানা তো।বুঝলে আর গাইয়ের খোঁজ করতা।বাল পাইকা ঝুনা অইয়া গেছে অহনও বুঝনা। আরে আজকেই বউ ঝিয়ের খোঁজ খবর রাখাই বলে কত কঠিন তার উপরে গাই।
একদমে কথাগুলো বলে একটু দম নেয় রমজান আলী ।মেসোর প্রতি অনেক রাগ। আরে মেসো আবার কিসের? একটা কিছু ডাকতে হয় বলে ডাকা। না হলে মালাউন আবার ইষ্টিগোষ্টি কিছু হয় নাকি? রমজানের রাগের কারণ হচ্ছে মূলত ভয় থেকে। তার ভয় এই বুড়ো আজ বাদে কাল তো ইন্ডিয়া চলে যাবেই। তার জমিজমা ঘরবাড়ি তার কাছে না বেচে যদি তালুকদার বা আকন্দের বেচে যায়। বুড়োর ভাব গতিক তো বুঝবার উপায় নেই।
মালাউনরা মনের কথা কয়না। রমজান রাতে রাতে দেখা করেছে যতীন বুড়োর সাথে।
মেসো উত্তরের কড়ইতলের জমিডা আমারে দেও।
জমি বেচবার কও? জমি বেইচা কী করমু আমি ? তারপরে কী কইরা খামু ?
ঐপারে গেলে একটা কিছু ব্যবস্হা অইব।
ঐপারে মানে? মরলে কী ব্যবস্হা অইব?
মরলে না মরলে না মেসো। ঐপারে মানে ঐ বডারের ঐপারে।
বডারের ঐপারে যামু ক্যান ?
বিরক্ত লাগে রমজানের। সে সহসা কথা খোঁজে পায়না।তাই কিছুক্ষ্রণ ঝিম মেরে থেকে চিন্তা ভাবনা কইরা দেহ। শেষে যদি এমুন অয় পইসাপাতি ছাড়াই খালি আস্তে যাওন লাগে।
বিরক্ত লাগে রমজানের। সে সহসা কথা খোঁজে পায়না।তাই কিছুক্ষ্রণ ঝিম মেরে থেকে চিন্তা ভাবনা কইরা দেহ। শেষে যদি এমুন অয় পইসাপাতি ছাড়াই খালি আস্তে যাওন লাগে।
যতীন বুড়োর জমি বাড়ির দিকে শুধু রমজানেরই নয় নজর পড়েছে তালুকদার ও আকন্দের।
একদিন সকালে যতীন দাশের বউ উঠানে নারকেল গাছের ছোবড়া পড়ে থাকতে দেখে গাছের দিকে তাকিয়ে দেখতে পায় নারকেল গাছে ডাব নারকেল কিছুু নেই। বুড়ি হন্তদন্ত হয়ে তার স্বামীকে ডাকে। যতীন দাশ সকালের আরামটা উপভোগ করছিলেন। বউয়ের ডাকে বাইরে এসে নারকেল গাছের দিকে তাকিয়ে প্রথমে কিছু দেখতে পাননা। চোখের উপরে হাত রেখে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দেখার চেষ্টা করেন। দেখেন কিছু নেই।যতীন দাশ বুঝতে পারেন এসব উপদ্রবের উদ্দেশ্য কী। তিনি পাড়ার হিন্দুদের সাথে কথা বলেন।অল্প কয়ঘর হিন্দুর বাস এ পাড়ায়। তাও সবাই গরিব। তারা কী করবা খুড়ো এইরকম অইত্যাচার আমারাও কত সইহ্য করি। কী করমু কও? আমাদের লগেই পায়। ইন্ডিয়াতে মাথাডা নিচা কইরাই চলন লাগে।
একদিন সকালে যতীন দাশের বউ উঠানে নারকেল গাছের ছোবড়া পড়ে থাকতে দেখে গাছের দিকে তাকিয়ে দেখতে পায় নারকেল গাছে ডাব নারকেল কিছুু নেই। বুড়ি হন্তদন্ত হয়ে তার স্বামীকে ডাকে। যতীন দাশ সকালের আরামটা উপভোগ করছিলেন। বউয়ের ডাকে বাইরে এসে নারকেল গাছের দিকে তাকিয়ে প্রথমে কিছু দেখতে পাননা। চোখের উপরে হাত রেখে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দেখার চেষ্টা করেন। দেখেন কিছু নেই।যতীন দাশ বুঝতে পারেন এসব উপদ্রবের উদ্দেশ্য কী। তিনি পাড়ার হিন্দুদের সাথে কথা বলেন।অল্প কয়ঘর হিন্দুর বাস এ পাড়ায়। তাও সবাই গরিব। তারা কী করবা খুড়ো এইরকম অইত্যাচার আমারাও কত সইহ্য করি। কী করমু কও? আমাদের লগেই পায়। ইন্ডিয়াতে মাথাডা নিচা কইরাই চলন লাগে।
হোন অভিলাষ ইন্ডিয়া আর বাংলাদেশ বইলা কথা না কথা অইল সবল আর দুর্বলের বুঝছ।
যতীন দাশের কথায় অভিলাষ তবু রাগে গজগজ করে।
যতীন দাশের কথায় অভিলাষ তবু রাগে গজগজ করে।
বুইঝা লাভ কী কও?
লাভ নাই লাভ নাই।
লাভ নাই লাভ নাই।
কারা করতে পারে এই কাম অনুমান করতে পার খুড়ো? আকন্দাজে কার কথা কমু কও?
হেইডাও ঠিক। গণেশ বিজ্ঞের মতো মন্তব্য করে। যতীন বাড়ি ফিরতে ফিরতে ভাবতে থাকেন কার কাজ হতে পারে? রমজান তালুকদার নাকি আকন্দের? তালুকদার আর আকন্দকে ছেড়ে তার মন কেন জানি রমজানকেই সন্দেহ করে।
মেয়ে দুটির বিয়ে দিয়েছেন নিজ জেলা ছাড়িয়ে। আসলে তার করার কী ছিল সবই প্রজাপতির সনির্বন্ধ। কাছেধারে আত্মীয় থাকলে বিপদে আপদে বল ভরসা পাওয়া যেত। আবার ভাবেন গরিবের আত্মীয় তো হয় গরিবেরাই। নিজে দুর্বল হয়ে অপরকে বল জোগাবে কী করে ? একটা পুত্র সন্তান থাকলে হয়তো উৎখাতের চিন্তা করতোনা। অন্যদের উপরও উপদ্রব তছরুপ হয় তবে তার মতো এরকম উঠেপড়ে লেগে নয়। মেয়েরা ও মেয়ে জামাইরা বেড়াতে অাসবে কদিন পরে। তার জন্য গিন্নি দুইটা বাক দেয়া মোরগ রেখে দিয়েছে। একদিন রাতে খোঁয়াড়ে শব্দ শোনা গেল। শেয়াল বা বনবিড়াল মনে করে বুড়ো বুড়ি দুজনে ঘর থেকেই হোস হোস করতে থাকলেন। তারপর বাতি জ্বেলে টর্চ হাতে বাইরে এসে দেখেন খোঁয়াড়ের দরজা হাট করে খোলা। শেয়াল বা বনবিড়াল নয় এটা মানুষের কাজ।
লেখক পরিচিতি : জন্ম ১০ অক্টোবর ১৯৭৭ ময়মনসিংহ জেলা ফুলবাড়িয়া উপজেলা কালাদহ গ্রাম। পিতা: মোঃ আরজউল্যাহ মাতাঃ ফজিলা খাতুন। দম্পতির পঞ্চম সন্তান তিনি। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত এক পুত্র সন্তানের জনক। তিনি কেশরগঞ্জ মহাবিদ্যালয় বাংলা বিভাগ প্রভাষক হিসেবে কর্মরত। তার প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ অন্যস্বর দৃষ্টি প্রতিভা এবং উপন্যাস গায়েন।
COMMENTS